সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রামজীবনপুর জেলেপাড়ার তিন শিশুসহ দুই তরুণকে ভোলার চরফ্যাশনের রনক ইটভাটাসহ অপর একটি ইটের ভাটায় আটকে রেখে জোরপূর্বক কঠোর পরিশ্রমের কাজে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগিদের পরিবারের সদস্যরা শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়ে তাদের সন্তানদের দ্রুত উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শ্রমিক সর্দার মিজানুর রহমান স্বল্প পরিশ্রমের শর্তে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে এসব শিশু ও তরুণকে কৌশলে আটকে রেখে চরম কষ্টের কাজে লাগাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী শিশু ও দুই তরুণের পরিবারের দাবি। পূর্ণ বয়স্কদের সমান কাজ করতে না পেরে মোবাইলে পরিবারের কাছে নিজেদের উদ্ধারের আকুতি জানানোর পর সন্তানদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছে তাদের স্বজনরা। এমনকি পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলায় মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলাসহ পরক্ষণে দুই ভাগে বিভক্ত করে এসব শিশু ও তরুণকে পৃথক দুটি ইট ভাটায় রেখে কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
এদিকে, ইট ভাটার কাজে নিয়োজিত অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের ফিরে পেতে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পাঁচ শিশুর পরিবার। তারা সমবেতভাবে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেনের সাথে দেখা করে দ্রুত সন্তানদের উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
এসময় তারা জানান, সন্তানরা নিজেদের উপর নির্যাতনের তথ্য বাড়িতে ফাঁস করে দেয়ায় তাদের কাঠের চ্যালা দিয়ে রোববার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে বেপরোয়া মারপিট করা হয়েছে। এমনকি তাদের সন্তানদের সাথে চুক্তিপত্রের সাদা স্ট্যাম্প কাজে লাগিয়ে পরিবারসহ কর্মরত শিশুদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করারও হুমকি দিচ্ছে সর্দার ও তার লোকজন।
ইট ভাটায় আটকে পড়া শিশু ও তরুণদের স্বজনরা জানান, করোনাকালীন সময়ে স্কুল ও মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নয়ন, আশিক ও আল আমিন। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে শ্যামনগর উপজেলার জানগর গ্রামের মিজানুর রহমান তাদেরকে ছয় মাসে ৫২ থেকে ৫৫ হাজার টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ইট ভাটার কাজে নিয়ে যায়। এর আগে ভিম ও অসীম নামের দুই তরুণকে যথাক্রমে ১ লাখ ১৫ ও ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দেয়ার শর্তে একই ইট ভাটার কাজে নিয়ে যায় সর্দার মিজানুর রহমান।
তাদের অভিযোগ, স্বল্প পরিশ্রমের (ইট উল্টানো) কথা বলে ইট ভাটায় নেয়া হলেও সেখানে নিয়ে কঠোর পরিশ্রমের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে ছোট্ট এসব শিশু ও তরুণদের। এছাড়া ইট ভাটা থেকে কয়েকজন পূর্ণ বয়স্ক শ্রমিক পালিয়ে যাওয়ায় শ্রমিক সংকটের সুযোগে তাদেরকে বড়দের ভারী কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অগ্রীম নেয়া টাকা ফেরত দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও শ্রমিক সর্দার তা মানছেন না বলেও পরিবারগুলোর দাবি। ভিমের পিতা সিন্ধু ধিবার জানান, কষ্টের কাজ করতে না পেরে তার ছেলে গত রোববার পালানোর চেষ্টা করে। এসময় ভিমকে আটকের পর তার প্রতিবেশীর ছেলে অসীমের সাথে বেঁধে বেপরোয়া মারপিট করেছে। ওই ঘটনার পর থেকে সর্দার মিজানুরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সে ফোন ধরছে না।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম বাদল জানান, এসব বিষয়ে থানা পুলিশকে কেউ কিছু জানায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেন জানান, নিজ সন্তানদের উদ্ধারে সিন্ধু, শম্ভু ও সারথী ধিবার নামের কয়েকজন তার কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত অপ্রাপ্ত বয়স্কদের উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।