খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ‘আড়ালের নায়ক’ মার্টিনেজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

র‍্যান্ডাল কোলো মুয়ানি ফ্রান্সের বিশ্বকাপ ফাইনালের একাদশেই ছিলেন না। মাঠে এসেছিলেন উসমান দেম্বেলের বদলি হিসেবে। ঠিক যেমন আট বছর আগে এস্তাদিও দে মারাকানায় মিরোস্লাভ ক্লোসার বদলি হয়ে মাঠে এসেছিলেন মারিও গোৎজে।

গোৎজের সঙ্গে কোলো মুয়ানির আরেকটা জায়গায় মিলে যাচ্ছিল। যোগ করা অতিরিক্ত সময় শেষ, তিন মিনিট ইনজুরি সময়েরও শেষ কয়েক সেকেন্ড চলছে। তখনই সেই কোলো মুয়ানি রীতিমতো একাই পেয়ে গেলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে। একটু এদিক-ওদিক হলেই আরও একবার তীরে এসে তরী ডোবা নিশ্চিত ছিল আর্জেন্টিনার। গোলটা হজম করলে যে শোধ করার সময়ই ছিল না!

তবে গোলবারে এমি মার্টিনেজ আবির্ভূত হলেন রীতিমতো দেয়াল হয়ে। পা দিয়ে ঠেকালেন কোলো মুয়ানির সে শট। খেলাটা তাই গেল টাইব্রেকারে।

পেনাল্টি শ্যুট আউটে তার দক্ষতা তিনি দেখিয়েছেন আগেও। গেল বছরের কোপা আমেরিকায়, কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে ঠেকিয়েছিলেন তিন তিনটি শট; ঠেকিয়েছেন এই বিশ্বকাপেও, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেই তো ঠেকিয়েছেন দুটো পেনাল্টি। সেই ‘রুটিন’টা ফাইনালেও মানলেন এমিলিয়ানো। ঠেকালেন কিংসলে কোম্যানের দারুণ শটটা। আর্জেন্টিনা জয়ের সুবাসটা পেতে শুরু করে তখনই।

ফাইনালের ম্যাচসেরা লিওনেল মেসি হয়েছেন। তবে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা যদি তিন গোল হজম করা এমি মার্টিনেজকেও দেওয়া হতো, তাহলেও বোধ হয় ভুল কিছু হতো না আদৌ। মেসির দুই গোল, অ্যাসিস্ট, পেনাল্টি শ্যুট আউটে গোলের সমান মূল্য যে তার দুটো সেভেরও ছিল!

ম্যাচসেরার পুরস্কারটা এমি মার্টিনেজ জেতেননি, টুর্নামেন্টসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারটা জিতেছেন। পুরো টুর্নামেন্টে যে প্রভাবটা বিস্তার করেছেন তিনি, এরপর অলিভার কানের পর প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারটা জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।

তার পারফর্ম্যান্সগুলো দেখুন, সৌদির কাছে দুই গোলে হারের পর আর্জেন্টিনার ভাগ্য যখন ঝুলছে সুতোয়, মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচে জয়টা অতীব প্রয়োজন ছিল তখন। সেই ম্যাচের ৪৪ মিনিটে অ্যালেক্সিস ভেগা নিয়েছিলেন দারুণ এক ফ্রি কিক, সেটা যদি জালে জড়িয়েই যেত শেষমেশ, আর্জেন্টিনার ফিরে আসতে পারত কি না ম্যাচে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর্জেন্টিনা শেষমেশ গোলটা হজম করেনি মার্টিনেজের ‘বাজপাখি’ হয়ে ওঠায়।

ঝড়ের মুখে পড়ে যাওয়া আর্জেন্টিনার বাতিটা মার্টিনেজ হাতের আড়াল দিয়ে বাঁচিয়েছেন আরও বহুবার। দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গারাং কুয়োলের সেই শটটার কথাই ধরুন? সে শটে গোল হয়ে গেলে খেলাটা গড়াত অতিরিক্ত সময়ে। আর সেটা হলে যে হয়ে যেতে পারত যে কোনো কিছুই! মার্টিনেজ তা হতে দেননি। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালের সেই পেনাল্টি শ্যুট আউট হয়ে এবার ফাইনালেরও অন্যতম নায়ক বনলেন তিনি!

লিওনেল মেসি কোপা আমেরিকার সময় তার সঙ্গে একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘সে একজন ফেনোমেনন’। কথাটা এমিকে এত বেশি প্রভাবিত করেছিল যে, রীতিমতো বলেই দিয়েছিলেন, ‘মেসি চাইলে মরেও যেতে পারি, তার জন্য জীবনটা দিয়ে দেবো!’

মেসি কেন সে কথাটা বলেছিলেন, মার্টিনেজ এরপর তা কোপা আমেরিকায় প্রমাণ করেছেন। এবার বিশ্বকাপেও করলেন।

গোলরক্ষকদের কাজটা এমনিতেই ‘থ্যাংকলেস জব’ হয়। গোল বাঁচালে বাহবা নেই, কিন্তু ছেড়ে বসলে দুয়ো শুনতে হয় সবার আগে। এমিলিয়ানো আড়ালে থেকে গেছেন এবারও। তবে তাতে হয়তো তার কোনো খেদও নেই। দলকে, মেসিকে যে প্রতিশ্রুত বিশ্বকাপ শিরোপাটা জেতানো হয়ে গেছে!

খুলনা গেজেট/ এসজেড




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!