খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ; পাশের হার ৭৭.৭৮
  খাগড়াছড়ির দীঘিনালাতে যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার

সাতক্ষীরায় চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় দিন দিন চিকিৎসক শুন্য হয়ে পড়ছে জেলার সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গুলো। ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না জেলার সাধারণ মানুষ। জেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎস্যকের সংকটের কারণে রোগিদের একটি বড় অংশ মোটা অংকের টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে চলে যাচ্ছে পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে। সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক ষ্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ভারতে গমনকারি পার্সপোট যাত্রীদের প্রায় ৩০শতাংশ মেডিকেল ভিসায় যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, সাতক্ষীরা বক্ষব্যাধী ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় ও ইউএসসি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গুলোতে মোট ২১৮টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এসব পদের মধ্যে মাত্র মাত্র ৭৪জন চিকিৎসক কর্মরত আছে। বাকি ১৪৪টি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদই শুন্য রয়েছে। আবার কোন কোন চিকিৎসকের কর্মস্থল জেলা সদরের বাহিরে থাকলেও সময় দেন না অনেকেই। এমনকি ইউএসসি কেন্দ্রের চিকিৎসকদের চেনেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা এলাকাবাসী। ফলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব, পদ শুন্য ও ইউএসসিতে কর্মরত চিকিৎসকরা কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় সঠিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বি ত গ্রামীন জনপদের সাধারণ মানুষ বলে মন্তব্য করেন জেলার নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সূত্র আরো জানায়, সাতক্ষীর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে চিকিৎসকের পদ রয়েছে তিনটি। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসারের পদ শুন্য রয়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৭টি। এর মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট(চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী), সিনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডরিয়াট্রিক্স), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (বিষয়বিহীন) জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজিষ্ট), এম,ও (আয়ুর্বেদী)সহ ১১ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদই শুন্য রয়েছে।

জেলার একমাত্র বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের দুইটি পদের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট, বক্ষ’র পদ দীর্ঘ দিন যাবত শুন্য রয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিন টি পদ থাকলেও জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেস:) ও মেডিকেল অফিসার (ডিসি) এর পদ শুন্য।
আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ১০টি পদের বিপরীতে জুনিয়র কনসালটেন্ট যথাক্রমে এ্যানেসথেসিয়া, সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী ও মেডিকেল অফিসার একজন, ডেন্টাল সার্জনসহ ছয়জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদই শুন্য রয়েছে।

দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২২টি। যথাক্রমে জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেসথেসিয়া, সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী, শিশু, অর্থ, কার্ডিও, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন, শিশু, রে:পার:, আর.এম.ও, ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসার দুইজন, সহকারী সার্জন দুইজনসহ ১৭জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদই শুন্য রয়েছে।

তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১টি পদের মধ্যে আর.এম.ও, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী, শিশু, কার্ডিও, চক্ষু, ইএনটি, জুচর্ম ও যৌন এবং মেডিকেল অফিসার একজন, এ্যানেসথেটিষ্ট, প্যাথলজিষ্ট, ডেন্টাল সার্জন ও এমও,আর্য়ু:সহ ১৪জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে।

কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১টি পদের মধ্যে আর.এম.ও, জুনিয়র কনসালটেন্ট যথাক্রমে এ্যানেসথেসিয়া, মেডিসিন, গাইনী, শিশু, অর্থ, কার্ডিও, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন এবং ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ইমাজেন্সী মেডিকেল অফিসার, এ্যানেসথেটিষ্ট, এমও/হোমিও/আয়ূ:/ইউনানী ও ডেন্টাল সার্জনসহ ১৫জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদই শুন্য রয়েছে।
শামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১টি পদের মধ্যে আর.এম.ও, জুনিয়র কনসালটেন্ট যথাক্রমেক মেডিসিন, সার্জারী, মেডিসিন, শিশু, অর্থ, কার্ডি, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন এবং, মেডিকেল অফিসার দুইজন,ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ইমাজেন্সী মেডিকেল অফিসার, এ্যানেসথেটিষ্ট, প্যাথলজিষ্ট, এমও/হোমিও/আয়ূ:/ইউনানী ও ডেন্টাল সার্জনসহ ১৭জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে।

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ১০টি পদের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেসথেসিয়া, সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী এবং ডেন্টাল সার্জনসহ পাঁচজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে।

জেলা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয় সম্পাদক ডা. সুব্রত ঘোষ বলেন, চাহিদা মাফিক চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি না হওয়াসহ নানা জটিলতায় সঠিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বি ত সাধারণ মানুষ। আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় ও ইউনিয়ন সাব সেন্টারের যে সকল চিকিৎসক দেওয়া হয় তারা উচ্চ শিক্ষারসহ বিভিন্ন অযুহাতে সেখান থেকে চলে আসে। ফলে সেবা বি ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সাতক্ষীরার সভাপতি পবিত্র মোহন দাশ বলেন, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের চরম সংকটে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বি ত হচ্ছে জেলার হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। অভিজ্ঞ চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবায় সীমাহীন ভোগান্তি, দালালের দৌরাত্ম, বে-সরকারি ক্লিনিকের লাগামহীন বাণিজ্যের কারণে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে জেলার তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষ।

তিনি আরও বলেন, জেলায় সার্জারী, গাইনী, চক্ষু, এ্যানেসথেসিয়া, পেডরিয়াট্রিক্স, ইএনটি, প্যাথলজি ও রেডিওলজিস্ট, এম,ও(আয়ুর্বেদী) ও ডেন্টাল বিভাগে পর্যাপ্ত রোগী থাকলেও অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় মেডিকেল অফিসার এবং ধার করা চিকিৎসক দিয়েই দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। অনেকে আবার ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও অভিজ্ঞ চিকিৎসক না পেয়ে সীমাহীন হতাশা প্রকাশ করছেন বলেও তিনি জানান।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম বলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান এক সময় খুবই ভাল ছিল। তখন সাধারণ জনগণ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসতো। কিন্তু বর্তমানে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের চরম সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি করে ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে। এ কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অর্ন্তভূক্ত আছেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন চিকিৎসক সংকট থাকলেও তাদের কোন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখ জনক উল্লেখ করে সাতক্ষীরায় চিকিৎসক সংকট মোকাবেলায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা প্রশাসককে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজরিহা হোসেন জানান, প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে ১২শ’ লোক বৈধভাবে পার্সপের্টে এই পথ দিয়ে ভারতে যায়। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ মেডিকেল নিয়ে যাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সবিজুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালটি একশ বেডের হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন দুইশ থেকে আড়াইশ রোগী অন্ত:বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকে। এছাড়াও প্রতিদিন বহি:বিভাগ প্রায় সাড়ে চারশ এবং জরুরী বিভাগে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে হয়। সব মিলিয়ে সদর হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় আটশ’ থেকে নয়শ’ রোগীকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয়ে। কিন্তু এসব রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য যে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা সে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ দীর্ঘ দিন যাবত শুন্য হয়ে আছে।

তবে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুন্য থাকলে সাধারণ চিকিৎসকের কোন ঘাটতি নেই দাবি করেন তিনি আরও বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি অধিদপ্তরে প্রতি মাসে জানানো হয়। ব্যক্তিগতভাবেও যোগাযোগ করা হয়। ইতিমধ্যে ৪২বিসিএস থেকে ৫৩জন মেডিকেল অফিসার সদর হাসপাতল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেছে। এসব মেডিকেল অফিসার দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!