খুলনার ফুলতলা উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নে একটি খামারের কারণে ৪ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতায় তাঁদের জীবনযাপন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলোর কয়েক হাজার বিঘা জমি ও শতাধিক নার্সারি পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ির উঠানেও উঠেছে পানি। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে হাজারো মানুষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফাইভ স্টার নাম একটি প্রতিষ্ঠানের খামারের কারণে এলাকাবাসী এই ভোগান্তিতে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিলের জমি ভরাট করে গরু ও মাছের খামার করেছে।
এলাকাবাসী জানান, প্রায় ১০-১২ বছর আগে ফুলতলা ইউনিয়নের মালিয়া বিলে অল্প অল্প জমি কিনতে শুরু করেন ঢাকার ব্যবসায়ী ও নারায়নগঞ্জের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। বর্তমানে তিনি ওই বিলে ৭০ একর জমি কিনেছেন। বিলের জলাশয় ভরাট করে ২ বছর আগে একটি গরুর ফার্ম করেন। নাম দেন ফাইভ স্টার। আস্তে আস্তে তিনি পুরো বিলটি ভরাট করেন। গত বছর খুলনা-যশোর মহাসড়কের রাড়ীপাড়া এলাকায় ফুলতলা ইউনিয়নের পিছনে ভরাট করে ফাইভ স্টারের প্রধান ফটক করা হয়। ওই স্থানে পানি নিষ্কাশনের একটি কালভার্ট দিয়ে এই এলাকার পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু প্রধান ফটকের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।
এখন কালভার্টটি দিয়ে শুধু ফাইভ স্টার ফার্মের বর্জ্য ও পানি নিষ্কাশন হয়। ফলে আশপাশের রাড়ীপাড়া, দক্ষিণডিহি, নাউদাড়ী ও সরদার বাড়ি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।রাড়ীপাড়া গ্রামের ফরিদা ইয়াসমিনের বাড়িতে হাটু পানি। পানি মাড়িয়ে তাঁকে এ ঘর
থেকে ও ঘরে যেতে হয়। দূষিত পানির মধ্যে দিয়ে চলাচলের কারণে পায়ের পাতা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কোনো দিন পানি জমেনি। এই প্রথম উঠানে পর্যন্ত পানি জমে গেছে। একপাশে আইয়ান জুট মিল অন্য পাশে ফাইভ স্টার পানি যাওয়ার জায়গা আটকে দিচ্ছে’।
নার্সারি মালিক ও শিক্ষক আক্তার সরদার বলেন, ‘ ফুলতলার নার্সারি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারা যায়। পানি জমে যাওয়ায় আমার এ বছর প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ফাইভ স্টারের ভেতরের বর্জ্য নিষ্কাশনের যে ড্রেন আছে তার সঙ্গে একটি ড্রেন যুক্ত করা গেলে এই সমস্যা থাকত না’
ফাইভ স্টারের ব্যবস্থাপক তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে পানি জমে থাকায় আমাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের মালিক বারবার বলছে এই জলাবদ্ধতা কীভাবে সমাধান করা যায় তার পথ বের করতে। আমরা খুব শিগগিরই একটি ড্রেন করে দেব। সেটা হলে আশা করা যায় জলাবদ্ধতা অনেক কমে যাবে’।
আইয়ান জুট মিলস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, ‘আমাদের জুট মিলটা ১২/১৩ বছর আগে করা। তখন কিন্তু এখানে জলাবদ্ধতা হয় নাই। ওনারা (ফাইভ স্টার) ড্রেনটা বন্ধ করে রাখার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। আমরা ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানসহ একটি কমিটি করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি’।
ফুলতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার বলেন, ‘এই পানির কারণে আমিসহ আমার জনগন বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। ড্রেন কেটে কীভাবে পানি সরানো যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে ইরি চাষটা করা যায়’।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের আলহাজ¦ শেখ আকরাম হোসেন বলেন, ‘ফাইভ স্টার ফার্মের সীমানা প্রাচীর ও প্রধান ফটকের সামনের ড্রেনটি সংকচিত করার কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় যে গ্রামগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, সে ব্যাপারে দুটি পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়েছে। ফার্মের পূর্ব পাশ দিয়ে ড্রেন করে ভৈরব নদের সাথে মিলিয়ে দেয়া অথবা খুলনা-যশোর মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ড্রেন দিয়ে পানি বিল ডাকাতিয়াতে সরিয়ে দেয়া। দুটির মধ্যে যেটিতে সুবিধা হবে, সেটিই শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে’।