খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
সংরক্ষক নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারি

কালিগঞ্জ বসন্তপুর নদী বন্দরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর তীরে অবস্থিত বসন্তপুর নদী বন্দরের সংরক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)কে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব মোহা: আমিনুর রহমান কর্তৃক ২৬ অক্টোবর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের গেজেট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে বসন্তপুর নদী বন্দর প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো।

সীমান্তের ইছামতী-কালিন্দী ও কাকশিয়ালী এই তিন নদীর মোহনায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বসন্তপুর গ্রাম। ৫৮ বছর আগে এখানে ছিল সমৃদ্ধ নৌবন্দর। বাণিজ্য হতো ভারতের সঙ্গে। কাছেই সীমান্তের ওপারে ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ। সেখান থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার। আর বসন্তপুর থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম। তখন বসন্তপুর ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করা হতো। এছাড়া সাতক্ষীরার উৎপাদিত মাছ, কাঠ ও কাঠের তৈরী সামগ্রীসহ স্থানীয়ভাবে উদপাদিত বিভিন্ন পণ্য ভারতে রপ্তানী হতো এই নৌ বন্দর দিয়ে।

সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বসন্তপুর নদী বন্দর প্রতিষ্ঠায় দলের জেলা কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও পরিত্যাক্ত এই বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন। কমিটির প্রধান শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাপ করে বন্দর প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গতিশীল করেন। এরপূর্বে সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ‘বসন্তপুর নদী বন্দর, প্রতিষ্ঠায় বেশকিছু কার্যক্রম হাতে নেন।

২০২০ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে বন্দর প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে বেশকিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সাতক্ষীরার নাগরিক সমাজও এই দাবীর পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন এবং জেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করে জেলার উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি দাওয়ার সাথে বসন্তপুর নদী বন্দরের বিষয়টি আলোচনা করেন। সম্প্রতি সাতক্ষীরা নাগরিক অধিকার ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ বসন্তপুর নৌ বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন।
সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম মোস্তফা কামাল ২০২০ সালের নভেম্বরে ‘বসন্তপুর নদী বন্দর, সাতক্ষীরা’ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটি গোপন প্রতিবেদন পাঠান। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী সেটাতে সম্মতি দেন এবং ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে বন্দর প্রতিষ্ঠার সম্ভাবতা যাচাই এর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় নৌবন্দরের সম্ভাব্যতা ও সুফলতা যাচাই করে।

উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও সুন্দরবনের সাথে ভারতের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর নামক স্থানে একটি নৌ-বন্দর বিদ্যমান ছিল। বসন্তপুর হতে ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত যাতায়াত ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু ছিল। তখন সেখানে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন বিভাগের কার্যক্রমও চালু ছিল। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর উক্ত রুটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও স্থানীয় জনগণ উক্ত রুটে যাতায়াত করত।

স্বাধীনতার পরও এই পথ দিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের মানুষের চলাচল ছিল। নৌপথে উল্লেখিত স্থান দিয়ে কালিগঞ্জের বিখ্যাত নাজিমগঞ্জ বাজার ও ভারতের হিঙ্গলগঞ্জের মধ্যে বাণিজ্য ও সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা চালু ছিল যা ১৯৯৬ সালের পরে আইনানুগভাবে পুনরায় চালু না করার কারণে সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে যায়। পোর্ট চালু থাকাকালীন শুল্ক বিভাগের ব্যবহৃত রামজননী নামক ভবনটি এখনও শুল্ক বিভাগের গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে কিছু করার তাড়না থেকে কালিগঞ্জের বসন্তপুর নৌ-বন্দরটি চালুর উদ্যোগ মাথায় আসে। এরআগে সাতক্ষীরা জেলাকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন করি। সেই আবেদনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরাকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। বসন্তপুর নৌবন্দরটিও সরকার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। বন্দরটি চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে খুলে যাবে সম্ভাবনার দুয়ার। সাতক্ষীরায় প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে উদ্বাস্তু হচ্ছে হাজারো মানুষ। কর্মসংস্থানের অভাব এ জেলায় প্রকট। জেলায় নেই কোন ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। বসন্তপুর নৌবন্দর চালু হলে মানুষ কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাজধানী ঢাকাসহ এজেলায় যুক্ত হবে নতুন পালক।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম বসন্তপুর নদী বন্দর প্রতিষ্ঠায় সরকারী প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ, সংসদ সদস্যবৃন্দসহ অনেকেই ভূমিকা রেখেছেন। আর সেটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগ গঠিত শেখ এজাজ আহমেদ স্বপনের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে। তিনি এজন্য শেখ এজাজ আহমেদ স্বপনসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং সাতক্ষীরার উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!