খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  বকেয়া বেতনের দাবিতে মিরপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
  বাড্ডা থানার আলামিন হত্যা : আনিসুল হকের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  ইসরায়েলি সেনা ক্যাম্পে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলা, নিহত ৪

সাতক্ষীরায় আশ্রয় কেন্দ্রে ৩৫ হাজার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলাসহ সাতক্ষীরা জেলার সর্বত্র টানা বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া বইছে। একই সাথে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদ-নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিকাল থেকে উপকূলজুড়ে শুরু হয়েছে মাইকিং। মোড়ে মোড়ে উড়ানো হয়েছে লাল পতাকা। মাইকিং করে উপকূলের জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরে যাওয়ার পাশাপাশি নারী, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা ও গর্ভবতী মহিলাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

এদিকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে কমপক্ষে ৩৫ হাজার লোককে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনের আশা এখনো অব্যহত রয়েছে। প্রাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার পানি, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সাথে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নেরও সব আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক আলী আজম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে একধরনের আতংক বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ যতটা না ভয় পাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে, যদি নদ-নদীর জোয়ারের পানি ৫ থেকে ৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে তাহলের এলাকার মানুষের সহায় সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। পানিতে তলিয়ে যাবে চিংড়ি, ফসলি জমি, পুকুর ও জলাশয়।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নি¤œ চাপের প্রভাবে সাতক্ষীরায় বৃষ্টিপাতের সাথে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বেড়েছে। এছাড়া নদ-নদীর পানির ইতিমদ্যে ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার মধ্যরাত বরাবর উপকুলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানতে পারে। সকল উপকুলীয় এলাকায় ৭ নম্বর দূরবর্তি হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে পদ্মপুকুর ইউনিয়ন সিপিপির টিম লিডার জি এম মাসুম বিল্লাহ জানান, নদীতে ভাটা শেষে এখন জোয়ার উঠছে। সকাল থেকে দমকা হাওয়ার সাথে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ারের পানি গতদিন থেকে আজ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে, এলাকার মানুষ নাজুক বেড়িবাঁধ নিয়ে আতংকিত। দুপুরের জোয়ারে প্রতাপনগরের চুইবাড়িয়া ও দৃষ্টিনন্দন বেড়িবাঁেধ ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সাইক্লোন শেল্টার গুলেতে বিকাল থেকে লোক আসছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সাইক্লোন শেল্টারে লোক আসা অব্যহত রয়েছে। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুরের চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অধিকাংশ ঝুকিপূর্ণ। কামালকাটি, ঝাপা, পশ্চিম পাতাখালী, পূর্ব পাতাখালী, চন্ডিপুর চাউলখোলা, পাখিমারা এলাকার বেড়িবাধ নাজুক। মাইকিং করে সর্তক করা হচ্ছে। সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে শুকনা খাবার ও পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বুড়িগোয়ালিনীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের যাওয়া শুরু করেছে। দুর্গাবাটি গ্রামের খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ দুর্বল থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, নদীতে জোয়ার শুরু হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে বাতাসের গতি একটু বেড়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এমন কোন পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। চারপাশে নদীবেষ্ঠিত গাবুরাকে ঘিরে থাকা বাঁধ আইলার পর থেকে বেশ নিচু হয়ে আছে। এছাড়া ইয়াস ও আম্পানের পর থেকে বড়গাবুরা, হরিশখালীসহ কয়েকটি অংশের বাঁধও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এমতাবস্থায় ইউনিয়নের ৪০ হাজারের বেশী মানুষ নিম্নচাপকে ঘিরে শংকিত হয়ে পড়েছে। মানুষজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। ইউনিয়নের ঝুকিপূর্ণ এলাকার অধিকাংশ মানুষ ইতিমধ্যে তাদের পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শাহীনুল ইসলাম জানান, সাইক্লোন শেল্টারগুলো খুলে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিংসহ অন্যান্য কার্যক্রম অব্যহত আছে।

জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির দূর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, সন্ধ্যা নাগাদ উপকূলীয় গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে কমপক্ষে ৩৫ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এখনো লোক আসা অব্যহত রয়েছে। এছাড়া জেলার সব আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও প্রয়োজনীয় ঔষধসহ চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতাধীন ৭৮০ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ রয়েছে। এর মধ্য ১০ টি পয়েন্টে ৮০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুকিপূর্ন। বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন এড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ২০ হাজার জিও ব্যাগ মজুদ রাখা হয়েছে। যা ইতিমধ্যে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকায় পাঠাতে বলা হয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!