সাতক্ষীরার কলারোয়ার বাটরায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সাফল্য দেখিয়েছেন কৃষকরা। স্বল্প সময়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষদের টমেটো চাষে আগ্রহ বাড়ছে। উৎপাদন ভাল হওয়ায় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে এখন ওই এলাকার অনেক চাষি গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটো চাষ করছেন। কলারোয়ার বাটরা গ্রামের অনেক কৃষক টমেটো চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এতে করে গ্রামের শত শত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলার বাটরা গ্রামের একটি ফসলের মাঠে ৮ বছর আগে স্বল্প পরিসরে গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটো চাষ শুরু করেন কয়েকজন কৃষক। অনুকূল পরিবেশ থাকায় প্রথম বছর থেকেই টমেটোর ভালো ফলন পাচ্ছেন তারা। বর্তমানে এই এলাকায় প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে ১৫০ জনের বেশি কৃষক একসঙ্গে গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটো চাষ করেছেন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছেন টমেটো চাষি সমবায় সমিতি। এতে স্বাবলম্বী হয়েছেন এখানকার অনেক কৃষক। অন্যদিকে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের।
কলারোয়ার বাটরা গ্রামের মতোই সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার অনেক এলাকায় এখন গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে কৃষকের খরচ হয় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমির টমেটো বিক্রি হয় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকায়। ফলে প্রতি মৌসুমেই টমেটোর চাষ ও উৎপাদন বাড়ছে। তবে চলতি বছর হঠাৎ করে তেল ও সারের মূল্য বৃদ্ধি এবং এলসিতে ভারত থেকে টমেটো আমদানি করায় নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি বাজারে এক কেজি গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। কয়েকদিন আগে এই টমেটো বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি।
বাটরা গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, কৃষি বিভাগের একটি প্রকল্পের আওতায় ৮ বছর আগে গ্রামের কয়েকজন কৃষক গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ শুরু করেন। তাদের সফলতা দেখে বর্তমানে আমাদের গ্রামের ১৫০ জন কৃষক কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটোর চাষ করছেন। তিনি বলেন, গ্রামের কৃষকরা এই চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি গ্রামের শত শত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ৫ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। তিনি আশা করছে এবার ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন।
কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত বছর দুই বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ হয়। চলতি মৌসুমে আরও তিন বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন তিনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও ভালো লাভের আশা করছেন তিনি।
কৃষক আতাউর বলেন, এরই মধ্যে ক্ষেতের প্রায় ৫০ শতাংশ টমেটো বিক্রি করেছেন। তবে গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির ফলে গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন। এছাড়া ডিজেল ও সারের মূল্য বৃদ্ধিতে খরচও বেড়েছে। তিনি বলেন, গত মৌসুমের এ সময় যে টমেটো পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৯০থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন তা এ বছর ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ঢাকা থেকে টমেটো কিনতে আসা ব্যাপারি মহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বাজারে ভারতীয় এলসির টমেটো আসায় দেশি টমেটোর চাহিদা কিছুটা কম। এজন্য দাম পড়ে গেছে। বর্তমানে সাতক্ষীরা থেকে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে টমেটো কিনছি। এসব টমেটো নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করব। তবে ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের লাভ কম হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলায় যে পরিমাণ উৎপাদন হয় তার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। এজন্য মাঝে মাঝে ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে টমেটো আমদানি করা হয়। তিনি বলেন, উৎপাদন আরও বাড়লে টমেটো আমদানি করা লাগবে না।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দীন বলেন, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এটি স্বল্প সময়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষদের টমেটো চাষে আগ্রহ বাড়ছে। জেলায় বারি-৪, ৮, ১০ ও ১১ জাতের উচ্চফলনশীল গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হচ্ছে বেশি হয়। তিনি বলেন, গত বছর সাতক্ষীরা জেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ হয়েছিল ৬০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর চাষ হয়েছে ৯৫ হেক্টর জমিতে।
খুলনা গেজেট/ টি আই