খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের জুন মাসের চার সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকাল থেকে শ্রমিকদের ব্যাংক একাউন্টে মজুরির অর্থ প্রদান করা হয়।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, বিকাল থেকে ব্যাংক থেকে মজুরি তোলা শুরু হয়েছে। জুন মাসের চার সপ্তাহের মজুরি প্রদান করেছে মিল কর্তৃপক্ষ।
মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন জানান, দুপুরে ব্যাংকে টাকা এসেছে। শ্রমিকরা নিজ নিজ একাউন্ট থেকে টাকা তুলছেন।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মো. গোলাম রব্বানী খুলনা গেজেটকে জানান, আজ মঙ্গলবার বিকাল থেকে শ্রমিকদের ব্যাংকের মাধ্যমে মজুরি প্রদান করা হয়েছে। জুন মাসের চার সপ্তাহের মজুরির বাবদ তার মিলের শ্রমিকদের ৬ কোটি ৬১ লাখ ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
পাটকলগুলোর সূত্রে জানা যায়, খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের প্লাটিনাম, ক্রিসেন্ট, স্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর, আটরা শিল্পাঞ্চলের ইস্টার্ণ, যশোরের কার্পেটিং, জেজেআই জুট মিলের শ্রমিকদের জুন মাসের চার সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হবে। এই ৮টি পাকলের শ্রমিকদের ২৭ কোটি ৩৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে কার্পেটিং জুট মিলে ৬৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, জেজেআই জুট মিলে ২ কোটি ৮৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা, ইস্টার্ণ ১ কোটি ৯৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, ক্রিসেন্ট ৬ কোটি ৮৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, প্লাটিনাম জুট মিলের ৬ কোটি ৬১ লাখ হাজার ৫ টাকা, স্টার জুট মিলে ৪ কোটি ৬২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, খালিশপুর জুট মিলে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৮১ হাজার ও দোলতপুর জুট মিলে ৫১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তবে মালিকানা জটিলতার কারণে আলীম জুট মিলের শ্রমিকদের মজুরি আসেনি।
বিজেএমসি খুলনার আঞ্চলিক সমন্বয়ক মো. বনিজ উদ্দিন মিয়া খুলনা গেজেটকে জানান, মঙ্গলবার থেকে খুলনা জোনের আটটি পাটকলের শ্রমিকদের জুন মাসের বকেয়া চার সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হয়েছে। মালিকানা জটিলতার কারণে আলীম জুট মিলের শ্রমিকদের মজুরি এখনো আসেনি।
এদিকে, এর আগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী পাটকল শ্রমিকদের জুন মাসের চার সপ্তাহের মজুরি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী তাদের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অওতাধীন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন আলিম জুট মিল বাদে অন্যান্য পাটকল শ্রমিকদের ‘জাতীয় মজুরি স্কেল,২০১৫’ অনুযায়ী ৫ জুলাই জুন মাসের বকেয়া মজুরি পরিশোধে ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত এ অর্থ শ্রমিকদের নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে দেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে জানানো হয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ‘পরিচালন ঋণ’ বা ‘অপারেশন লোন’ হিসেবে এ টাকা বরাদ্দ করেছে। বরাদ্দকৃত অর্থ ২০১৯-২০ অর্থবছরের বিজেএমসি’র মিলগুলোর জন্য বর্ণিত খাত ছাড়া অন্য কোনও খাতে ব্যয় করা যাবে না। বিজেএমসি শ্রমিকদের প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট ব্যাংকে অ্যাকাউন্টের (অ্যাকাউন্ট পে চেক) মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
উল্লেখ্য, পাটকল শ্রমিকদের নোটিশ মেয়াদের অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের ৬০ দিনের মজুরিও উভয় মাসে যথারীতি পরিশোধ করা হবে। পিএফ, গ্র্যাচুইটি ও গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ অবশিষ্ট সব পাওনার ৫০ শতাংশ নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে এবং বাকি ৫০ শতাংশ নিজ নিজ নামে সঞ্চয়পত্র আকারে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
সব ক্ষেত্রেই মজুরি কমিশন-২০১৫-এর ভিত্তিতেই পাওনা হিসাব করা হবে। ২০১৪ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের (৮ হাজার ৯৫৪ জন) প্রাপ্য সব বকেয়া, বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের (২৪ হাজার ৮৮৬ জন) প্রাপ্য বকেয়া মজুরি, শ্রমিকদের পিএফ জমা, গ্র্যাচুইটি এবং একই সঙ্গে গ্র্যাচুইটির সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হারে অবসায়ন সুবিধা একসঙ্গে শতভাগ পরিশোধ করা হবে।
অবসায়নের পর মিলগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে পিপিপি/যৌথ উদ্যোগ/জি টু জি/ লিজ মডেলে পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। নতুন মডেলে পুনরায় চালু হওয়া মিলে অবসায়নকৃত বর্তমান শ্রমিকেরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবেন। একইসঙ্গে এসব মিলে নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। সব শ্রমিককে পুনর্বাসন করা হবে।
খুলনা গেজেট/এমএম