সাতক্ষীরায় সাধারণ মানুষের পারাপারের জন্য উপকূলের নওয়াবেকী বাজারের পাশে খোলাপেটুয়া নদীতে চালু করা ফেরি পার হতে খেয়াঘাট ইজারাদার কর্তৃক যাত্রীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকী-পাখিমারা ঘাটে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের চালু করা ফেরি পারাপার হওয়া সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে খেয়াঘাটের ইজারাদার এই অর্থ আদায় করছেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে খোলপেটুয়া নদীর দুই পাড়ের উপকূলীয় পদ্মপুকুর, গাবুরা, আটুলিয়া ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরসহ পার্শ্ববর্তী খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বাসিন্দাদের জীবন জীবিকার জন্য প্রতিনিয়ত পার হতে হয় এই নদী। খোলপেটুয়া নদীর দু’পাশের উপকূলীয় মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে সাতক্ষীরা সওজ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে গত রোববার (৩ জুলাই) নওয়াবেকী বাজারের পাশে নওয়াবেকী-পাখিমারা ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়।
এদিকে, উদ্বোধনের পরের দিন থেকেই ফেরিঘাটের সামনে বাঁশ বেঁধে ফেরি ব্যবহার করে পারাপার হওয়া যানবাহন নিয়ে আসা যাত্রী ও সাধারণ যাত্রীদের কাজ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করছেন খেয়াঘাটের ইজারাদার ফরিদ হোসেন। যাত্রী মাথাপিছু ৫ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তাদের উপর রুঢ় ব্যবহার করছেন ইজারাদারের লোকজন। ফেরি পারাপারে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা নিয়ে সোমবার (৪ জুলাই) বিকালে স্থানীয় লোকজন ও ইজারাদারের লোকজনের মধ্যে কয়েক দফা বাকবিতন্ডা হয়েছে। এই টাকা আদায় করা নিয়ে যে কোন মুহুর্ত্বে সংঘর্ষেও ঘটনাও ঘটতে পারে।
ফেরি পারাপারের যাত্রী আকবর হোসেন বলেন, ফেরিতে আমার কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি। কিন্তু ঘাটে আমাকে ৫ টাকা দিতে হয়েছে। ইজাদারের লোকজন ফেরি ঘাটের পাথে বাঁশ ও বেঞ্জ দিয়ে পথ আটকে রেখেছে। টাকা না দিয়ে কেউ যেতে পারছেন না। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তাদের সাথে খারাপ আচরন করা হচ্ছে।
খোলপেটুয়া নদীর ওপারে পাখিমারা এলাকার বাসিন্দা একরামুল হোসেন বলেন, আমাদের এতদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলেও আমরা এখন হতাশ। আগে মটরসাইকেল নিয়ে খেয়া নৌকা পার হলে দিতে হতো ১০ টাকা। আর এখন নওয়াবেকী বাজার থেকে বাজার করে বাড়ি ফেরার সময় নওয়াবেকীর খেয়াঘাটের ইজারাদারকে বিশ টাকা দিতে হয়েছে এবং ফেরিতে ৫ টাকা দিতে হবে তাহলে আমার লাভ হল কি? আগের চেয়ে এখন খরচ আরো বেশি হচ্ছে।
এছাড়াও একজন এনজিও কর্মী বলেন, আমি আমার অফিসের কাজে পাতাখালি যাচ্ছি। আমাকেও মোটরসাইকেলের জন্য ঘাটে বিশ টাকা দিতে হয়েছে। সরকার এই এলাকার মানুষের যাতায়াাত ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু করেছে। কিন্তু সেই যদি খেয়াঘাটের ইজারাদারদের বাড়তি টাকা দিতে হয় তাহলে তো জনগণ উল্টে আর্থিক ভোগান্তির মধ্যে পড়লো।
এবিষয়ে খেয়াঘাটের ইজারাদার ফরিদ হোসেন বলেন, আমরা সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ থেকে ঘাট ইজারা নিয়েছি। এই ঘাটের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কেউ নদী পারাপার হলে তাদেরকে খেয়াঘাটের টোলের টাকা দিতে হবে। তাছাড়া ঘাটের টোল না নিলে আমাদের তো ইজারার টাকা উঠবে না। একই সাথে জেলা পরিষদ তো আর আমাদের টাকা ফেরত দিবে না। জেলা পরিষদের নিদের্শনা মোতাবেক আমার যাত্রীদের কাছ থেকে টোল নিচ্ছি। জেলা পরিষদ টোল বন্ধ করলে আমরা টাকা নিব না।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, একই স্থানে দ্বৈত শাসন চলে না। বাংলাদেশ সরকার এই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা সহজ করতে এ এলাকায় তাদের ফেরি উপহার দিয়েছে। এখানে শুধুমাত্র যে সকল যানবাহন পারাপার হবে সেসকল যানবাহনের টোল নেয়া হবে। এর বাইরে কোন খেয়াঘাটের ইজারাদার বা ফেরি কর্তৃপক্ষকে সাধারণ যাত্রীদের কোন টাকা দিতে হবে না। যদি খেয়াঘাটের ইজারাদাররা এমন কোন কর্মকান্ড করে তাহলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে জানাবেন।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, নওয়াবেকী খেয়াঘাটের পাশে খোলপেটুয়া নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু করার আগে সড়ক ও জনপদ বিভাগ জেলা পরিষদের কাছে একটি অনাপত্তি পত্র চেয়েছিল। আমরা ওই অনাপত্তি পত্রে লিখে দিয়েছিলাম যে, ফেরি সার্ভিস চালু হলেও সেখানে খেয়াঘাট চালু থাকবে। যেহেতু নওয়াবেকী খেয়াঘাটটি ইজারা দেয়া এবং সেটি জেলা পরিষদের একটি আয়ের উৎস বটে। এজন্য খেয়াঘাটের ইজারাদার ফেরি পার হওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে টোলের টাকা নিতে পারবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই