খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া
  ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা ৬ মামলা বাতিল করেছে হাইকোর্ট

পদ্মা সেতু’র বদৌলতে ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

পদ্ম সেতু খুলে দেয়ায় সরাসরি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে স্থলপথে সংযুক্ত হয়েছে রাজধানী ঢাকা সহ অন্যান্য বানিজ্য কেন্দ্র গুলো। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে বদলে যাবে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যের সার্বিক চিত্র। ভারতের কলকাতার সঙ্গে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব কম হওয়ায় সারা দেশে পণ্য পরিবহনে কমবে দূরত্ব, বাঁচবে সময়। ফলে স্থলপথে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাড়বে আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য। একইসঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে তৈরি হবে সামাজিক-অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন।

গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহি ট্রাক এখন দ্রæত সময়ের মধ্যে পৌছে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বানিজ্য কেন্দ্র গুলোতে। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছনোর কারণে পরিবহন খরচ কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হবেন ব্যবসায়িরা। এতে করে বাজারে পণ্যের দামও কমবে। ফলে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে ভোমরা বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে দ্বিগুণ। পাশাপাশি ভোমরা স্থলবন্দরে তৈরি হবে বহু মানুষের কর্মসংস্থান। এ জন্য আশায় বুক বেঁধেছেন ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক এবং আমদানি-রপ্তানিকারকরা।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। বাসন্তী হাইওয়ে হয়ে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা থেকে ভোমরায় পৌঁছে পণ্যবাহী ট্রাক। দূরত্ব কম হওয়ায় এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সময় লাগে কম।

অপরদিকে, ভোমরা বন্দর হয়ে কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩৭৫ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দর হয়ে ঢাকার দূরত্ব দাড়িয়েছে ৩৩০ কিলোমিটার। খুলনা-গোপালগঞ্জ হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়ায় দূরত্ব কমবে ৪৫ কিলোমিটার। ফেরিঘাটের দুর্ভোগ আর থাকবে না। সময় বাঁচবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ ও পণ্যবাহী যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে সহজে ঢাকায় পৌঁছাবে।

সাতক্ষীরার নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জানান, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম আলাউদ্দীনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। বর্তমানে এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কাজে জড়িত আছেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। প্রতিদিন বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। বছর শেষে রাজস্ব আদায় দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকায়। পদ্ম সেতু খুলে দেয়ায় এই বন্দরের আমদানি-রপ্তানির গতি কয়েক গুন বেড়ে যাবে। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমান।
তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকার সাথে সাতক্ষীরার দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার কমেছে। এছাড়া নেই ফেরিতে উঠার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ঘাটে দাড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করা। এখন ব্যবসায়িরা তাদের আমদানি করা পণ্য দ্রæত গন্তব্যে পৌছে দিতে পারছেন। এতে করে খরচ ও সময় দু’টোই সাশ্রয় হওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বন্দরের ব্যবসায়িরা। তিনি ভোমরা বন্দরের অবকঠামোগত উন্নয়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসায়িদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকার সঙ্গে ভোমরার দূরত্ব ৩০৫ কিলোমিটার। খুলনা মহাসড়ক হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যেতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। মাঝে মধ্যে এর চেয়ে বেশি সময় লাগে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন দূরত্ব কমায় ছয় ঘণ্টায় কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছাবে পণ্যবাহী ট্রাক। সাতক্ষীরার সবজি, ফল ও মাছ দ্রæত সময়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। ফলে অর্থনীতির চাকা পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু।

জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহিম বলেন, সাতক্ষীরা অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নবঞ্চিত। কৃষিতে সমৃদ্ধশালী হয়েও কেনাবেচা ও যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় অনেক কৃষিপণ্য পঁচে যেতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন সব ধরনের সুবিধা পাবেন কৃষকরা। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও কমবে।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, শুধুমাত্র ভোগান্তির কারণে ভোমরা বন্দর ব্যবসায়ীদের কাছে তেমন একটা গুরুত্ব পেতো না। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে গতি আসবে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হবে। বন্দরের কিছু উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে। এখানে কাস্টমস হাউস প্রয়োজন। সেটি হলে এই বন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে।

ভোমরা স্থলবন্দরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বর্তমানে বন্দরে প্রতিদিন পণ্যবাহী ট্রাক থেকে রাজস্ব আদায় হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব কম হওয়ায় পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে দ্রুত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সম্প্রসারিত হবে বাণিজ্য। ভারত-বাংলাদেশে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। অন্যান্য দেশের সাথেও বাংলাদেশে বাণিজ্যে আগ্রহ বাড়বে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!