সাতক্ষীরায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় জেলে সম্প্রদায়ের এক নারীকে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী সরদারের নেয়া দুই লাখ টাকা প্রতি মাসে তার মাসিক ভাতা থেকে কেটে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মধুমালাকে ফেরৎ দেওয়ার জন্য তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার (১৯ জুন) দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর কমপক্ষে ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতিতে এ আদেশ দেন।
জেলা প্রশাসকের কাছে তালা উপজেলার নগরঘাটার মহাদেব সরদারের মেয়ে মধুমালা সরদারের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মধুমালা সরদার। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর ছিল মৌখিক পরীক্ষার দিন। মৌখিক পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার নামে নগরঘাটার শরিতুল্লাহ সরদারের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী সরদার ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর মধুমালা সরদারের কাছ থেকে দুই লাখ এক হাজার টাকা নগদ গ্রহণ করেন। মৌখিক পরীক্ষায় মধুমালা পাস করতে না পারায় জাফর আলীর কাছে টাকা ফেরৎ চাইলে তিনি ওই টাকা ফেরৎ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গ্রাম্য শালিসে জাফর সরদার দেড় লাখ টাকা ফেরৎ দিতে রাজী হন। পরে টাকা না দেওয়ায় মধুমালা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গত বছরের ২৬ অক্টোবর অভিযোগ দিলে নোটিশ পেয়েও শালিসে আসেননি জাফর সরদার। পরে তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাছে অভিযোগ করেন মধুমালা। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে তিন বার নোটিশ করলেও সাড়া মেলেনি জাফর সরদারের। একপর্যায়ে গত ১৮ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে ২৭ এপ্রিল গণশুনানীতে জাফর সরদার দাবি করেন যে, তিনি মধুমালা সরদারের কাছ থেকে কোন টাকা নেননি।
নিরুপায় হয়ে মধুমালা বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে বিষয়টি অবহিত করনে। তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাঁচাই বাছাই কমিটির সদস্য সিটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার, নগরঘাটা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মতিয়ার রহমান, সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর আলী সরদার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল কান্তি ঘোষ,অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর ও তালা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজউদ্দিন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে রোববার একটি অভিযোগসহ মধুমালা সরদার, তার বাবা ও ছোট ভাইকে নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে আসেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর ঘটনার বর্ণনা শুনে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থিত থাকা তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসকে তাঁর কক্ষে ডেকে এনে জাফর আলী সরদার টাকা না দিলে তার মাসিক ভাতার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত মধুমালাকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
মধুমালার টাকা ফেরৎ দেওয়া সংক্রান্ত জেলা প্রশাসকের নির্দেশ নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার।
খুলনা গেজেট/ আ হ আ