খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৩ মে, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
  নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আরাকান আর্মির গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
  বয়সসীমা ৩৫ চেয়ে আন্দোলনকারী গ্রেপ্তার ১২ শিক্ষার্থীর জামিন : আদালত
  ঈদুল আজহার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি বহাল থাকবে : শিক্ষামন্ত্রী
  সারা দেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ; এসএসসিতে গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ, পাসের হারে শীর্ষে যশোর, সর্বনিম্ন সিলেট বোর্ড
কতিপয় মৎস্যচাষীর বেপরোয়া কর্মকান্ড

চৌগাছায় মাছের পেটে যাচ্ছে তিন হাজার বিঘা জমির ধান!

জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর

যশোরের চৌগাছায় কয়েক’শ বিঘা জমির রোপা আমন ধান গাছ মাছে সাবাড় করে দিচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে ঘেরের মাছ বিলে ছেড়ে দেবার কারণে ধানের এ ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা অভিযোগে জানিয়েছেন। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কয়েক ব্যক্তি এ ক্ষতির জন্য দায়ী। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন।

ভূক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন, চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রাম। এ গ্রামটি পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার গা ঘেঁষে অবস্থান। গ্রামটির পাশে হাজার বিঘা জমি নিয়ে একটি বিল রয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এটি দোবিলা বিল হিসেবে পরিচিত। বিলের প্রায় ১৭শ’ একর জমি সম্পূর্ণ সরকারি (খাস) যার পুরোটাই মহেশপুর উপজেলার অন্তর্গত। এছাড়া ৩ হাজার একর জমি ব্যক্তি মালিকানায়। যার অধিকাংশ জমি চৌগাছা উপজেলাবাসীর।

প্রায় ৫ হাজার একর জমির মধ্যে ১৭শ’ একর জমিতে মহেশপুর উপজেলার কতিপয় মৎস্যচাষী সরকার থেকে লিজ নিয়ে বিলে বছরের পর বছর মাছ চাষ করে আসছেন। বাকি ৩ হাজার একর জমিতে চৌগাছা উপজেলার কৃষকরা ধান চাষ করেন।

চাষিদের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই মহেশপুরের ওই মাছ চাষিরা পরিকল্পিতভাবে পাটাতন উঠিয়ে সমস্ত মাছ বিলে ঢুকিয়ে দেয়। এসব মাছ যখন সমস্ত বিলে চরে বেড়ায়, তখন কৃষকের রোপা ধান বিশেষ করে কার্প জাতীয় মাছে খেয়ে সাবাড় করে দেয়। অন্য বছর গুলোর মত এ বছরও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। কৃষকের রোপা হাজার হাজার বিঘা জমির ধান গাছ মাছে খেয়ে ফেলেছে। এ কারণে ধানচাষে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মাছের পেটে ফসল যাওয়ায় তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এ নিয়ে বিলের পাড়ে কৃষকরা দাঁড়িয়ে শুধুই হাহাকার করছে।

এসব বিষয়ে কথা হয় হোগলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘মহেশপুর উপজেলার কয়েক ব্যক্তির কারণে প্রতি বছর বর্ষা আমাদের জন্য আর্শিবাদ না হয়ে, অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়। বর্ষা এলেই মহেশপুর বিলের মাছ চাষিরা চৌগাছার শত শত কৃষককে পথে বসায়। তারা বিলের মাছ ক্ষেতে ঢুকিয়ে ধানের চারা সাবাড় করে দিচ্ছে। চোখের সামনে এ ক্ষতি তাদের দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।’ তারা এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফলাফল পায়নি বলে জানান।

রফিকুল ইসলামের মত ওই গ্রামের কৃষক শহিদ, আবু মুসা, আঃ হাকিম, মোসলেম উদ্দিন, আব্দুর রহিম, আলাউদ্দিন, নুুর ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৫ হাজার একর জমি নিয়ে এই বিলের ১৭শ’ একরই হচ্ছে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত। এই জমি মহেশপুরের কয়েকজন সরকার থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। তাদের সুবিধামত বিলের পানি বের হওয়ার জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। সরু এই ব্রিজটির মুখ বর্ষা এলেই তারা বন্ধ করে দেয়। যার কারণে দেখতে দেখতে বিলের পানি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেই সুযোগে তারা চাষ করা মাছ পাটাতন উঠিয়ে সমস্ত বিলে ছড়িয়ে দেয়।

ফলে ধান ক্ষেতসহ ৫ হাজার বিঘা জমিতে মাছ চরে বেড়ায়। এসময় কার্প জাতীয় মাছ সমস্ত ধান ক্ষেত সাবাড় করে দেয়। আর যখন মাছ সমস্ত বিলে চরে বেড়ায়, তখন মাছ চাষির সাঙ্গপাঙ্গরা নৌকা নিয়ে বিলে টহল দেয়। তখন আমরা আমাদের ক্ষেতে নামতে পর্যন্ত পারি না। বাধা ও হুমকি দেয়া হয়।’

কৃষকরা আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর আগেভাগেই ধান চাষ করেছিলাম। বিঘার পর বিঘা জমির ধান সবুজে সবুজে ভরে গেছে, এরপর শুরু হয় বর্ষা, তারপর মাছ চাষিরা তাদের মাছ সমস্ত বিলে ছেড়ে দিয়ে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন।’

বিষয়টি নিয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এনামুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তারই ভিত্তিতে সেখানে মৎস্য অফিসার ও স্থানীয় নায়েবকে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করা হবে।’ পাশাপাশি মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!