সাতক্ষীরার ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে আজ সোমবার (৯ মে) মনোনয়নপত্র বিক্রির শেষ দিন। তবে সবাই মনোনয়নপত্র কিনতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের মধ্যে। প্রায় কোটি টাকার বিনিময় ভারতীয় একটি চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে দেশীয় একটি স্বার্থন্বেষি মহল তাদেও পছেন্দের লোক ছাড়া অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র কিনতে বাধা দিয়ে একতরপা নির্বাচন করার জন্য নানামুখি তৎপরতা অব্যহত রেখেছে। আগামী ২৬ মে এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্টিত হওয়ার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সরাসরি ভোট গ্রহণের মাধ্যমে সাতক্ষীরার ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয় না। স্থানীয় বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা প্রশাসনের সহযোগিতায় মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের পছেন্দের লোককে দিয়ে কমিটি করেন। এক্ষেত্রে কার্যনির্বাহী পরিষদের ৯টি পদে পছেন্দের লোকের নামে মনোনয়ন বিক্রি করা হয়। বাকি কেউ মনোনয়নপত্র কিনতে পারেন না। এবারও একই পন্থায় ৯টি পদে শুধুমাত্র নয় জনের মনোনয়নের ব্যবস্থা করে দেয়া নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে চলছে দর তোলার প্রতিযোগিতা। সেক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত গোপন নিলামে ভোমরা স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের ৯টি পদ কত টাকায় বিক্রি হবে সেটা নিশ্চিত হতে আজ সোমবার বিকাল পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ঠ একাধিক ব্যবসায়ী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে কেউ তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি।
সূত্রমতে গত বছর জুলাইয়ের পর থেকে ভোমরা স্থল বন্দরের উপর নজর পড়ে ভারতের সীমান্ত এলাকার একটি অসাধু চক্রের। ঐ চক্র প্রতিদিন ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দরে সিরিয়ালের নামে ট্রাক প্রতি ৩০ হাজার টাকা আদায় করা শুরু করে। অন্যথায় সিরিয়ালের জন্য কৌশলে প্রতিটি ট্রাককে ১৫ দিন থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত বন্দরে আটকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। দীর্ঘদিন মালামালসহ বন্দরে আটকে থাকার পরিবর্তে টাকা দিয়েই ব্যবসায়ীরা দিনে দিনে ট্রাকগুলি ভোমরায় প্রবেশের ব্যবস্থা করে। ফলে এই কালো টাকা ভোমরা স্থল বন্দরের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালনের সুযোগ পায়।
সূত্র আরো জানায়, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফএজেন্ট এসোসিয়েশনের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করা হয়। এসময় নির্বাচন ছাড়াই কমিটি গঠনের জন্য দেড় কোটি টাকা লেনদেনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এনিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়। তারপরও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে নির্বাচনের পূর্বেই বার্ষিক সাধারণ সভায় কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠিত না হওয়ায় প্রায় তিনমাস পর ওই কমিটি বাতিল করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে আহবায়ক কমিটি দায়িত্ব নিয়েই ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় ট্রাক প্রতি ৩০ হাজার টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিলে দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের টনক নড়ে। একপর্যায়ে উক্ত টাকা আদায় বন্ধ না হলেও তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং খুব গোপনে সীমিত আকারে ওই কর্মকান্ড চলতে থাকে। এদিকে ভারতের ওই চক্রের ষড়যন্ত্রে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসাসিয়েশনের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ঠ আহবায়ক কমিটির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আহবায়কের পদ থেকে শেখ এজাজ আহমেদ স্বপনকে সরিয়ে দিয়ে মিজানুর রহমানকে নতুন আহবায়ক মনোনীত করা হয়।
অপরদিকে ভোমরা বন্দরে সরকার দলীয় সিএন্ডএফ এজেন্টের সংখ্যা সংগঠনটির মোট ভোটারের অর্ধেকের অনেক কম। যেকারনে নির্বাচন হলে সরকার দলীয় সমর্থক ব্যবসায়ীরা জিততে পারবে না, এমন ধোয়া তুলে নির্বাচন ছাড়াই কমিটি গঠনে শীর্ষ নেতারা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। আর এই সুযোগে একজন জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গতবারের ন্যায় এবারও মোটা অংকের টাকা নিয়ে পদ প্রত্যাশিদের দৌড়দৌড়ি চলছে বলে জানা গেছে। গত বার ৯ সদস্যের ওই কমিটি গঠনে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এবার আরো বেশি টাকায় গোপনে পদের জন্য দেনদরবার অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসি এক হাইব্রিড আ’লীগ নেতা বন্দরের সভাপতি পদের জন্য কোটি টাকা দর তুলেছেন বলে শোনা গেছে। নির্বাচনের খবর শুনে ওই ব্যবসায়ী সম্প্রতি দেশে ফিরে এসেছেন।
ব্যবসায়ী সূত্রগুলো আরো জানায়, এসোসিয়েশনের এই নির্বাচনের জন্য ভারতের একটি অসাধু চক্র তাদের তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে। কমিটির শীর্ষ দুটি পদে সরকার দলীয় কেউ আসছে, না সরকার দলীয় হাইব্রিড অথবা বিএনপি-জামায়াত পন্থি কেউ আসছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়নপত্র কিনতে দেওয়া হবে না এ বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত করা হয়েছে সুত্রগুলোর পক্ষ থেকে।