গ্রীষ্মের শুরুতেই বৃষ্টিহীনতার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না সাতক্ষীরার বেশির ভাগ অগভীর ও গভীর নলকূপে। একই সাথে প্রাকৃতিক পানির আধার গুলোর অধিকাংশ শুকিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
গত আড়াই মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় ভূ-উপরিস্থ পানি ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। ফলে তীব্র খরা, বৃষ্টি হীনতা ও গরমে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছে।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (পিএইচইডি) তথ্য অনুযায়ী, গ্রীষ্মের শুরুতেই বৃষ্টিহীনতার কারণে বর্তমান সময়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সাতশ’ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। তবে স্থান বিশেষে তা পাঁচশ’ ফুট পর্যন্ত রয়েছে। ফলে জেলার ২৫ হাজার সরকারি টিউবঅয়েলে পানি উঠছে না। এ ছাড়া পারিবারিকভাবে বসানো হাজার হাজার নলকূপেও পানি নেই। এমনকি সেচের পানি উত্তোলনও বাধার মুখে পড়ছে।
এদিকে সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় গ্রাহকদের বাড়িতে পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিছু এলাকায় পানি গেলেও শহরের বেশির ভাগ এলাকার জনসাধারণ পৌরসভার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব এলাকায় মানুষ ১২০০ ফুটেরও বেশি গভীর নলকূপ বসিয়ে নিজ নিজ পরিবারের পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার বাসিন্দা হালিমা খাতুন জানান, পারিবারিক পানির চাহিদা মেটাতে তার বাড়িতে নলকূপ বসানো রয়েছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে মটরে পানি উঠছে খুবই কম। এক হাজার লিটারের ট্যাংকি ভরতে তার প্রায় দুই ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে অনেক বেশি। এছাড়া বিকল্প হিসাবে বাড়িতে পৌর পানি সরবরাহের সংযোগও রয়েছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন হলো কোন পৌরসভার পানির লাইনে কোন পানি আসছে না।
একই কথা জানালেন শহরের পুরতান সাতক্ষীরার কলোনীপাড়া এলাকার জিল্লুর রহমানম পলাশপোল এলাকার মোহাম্মাদ আলী, কাটিয়া কলেজ রোড এলাকার আব্দুস সালাম ও নুরুল আলম, বাটকেখালী এলাকার সাইফুল হোসেন বাবু প্রমুখ।
পানি সংকটের এই সুযোগে শহর ও গ্রামাঞ্চলের বেশ কিছু পানি ব্যবসায়ী শোধনাগার প্ল্যান্ট বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে তা বিক্রি করছেন। এই পানি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এমন অবস্থায় সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষ তীব্র পানির সংকটের মুখে পড়েছে।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, জেলার ২৫ লাখ জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশ মানুষের খাবার পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কিন্তু পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বর্তমান সময়ে মানুষ ঠিকমত খাবার পানি পাচ্ছেন না।
তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে জেলায় ১১৫টি পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) বসানো রয়েছে। ভূ উপরিস্থ পানি নিয়ে তা শোধনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবারগুলিতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অথচ ভূ উপরিস্থ এসব পানিও এখন অনেক কমে গেছে। ফলে কোনো কোনো জায়গায় পিএসএফ যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না।বেসরকারি পর্যায়ে সাতক্ষীরার কয়েকটি এনজিও বিভিন্ন স্থানে এসব পিএসএফ বসিয়েছে। সেখানেও দেখা দিয়েছে একই সংকট।
‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ আরও জানিয়েছে, বৃষ্টি না হওয়ায় পানি যেমন অনেক নিচে নেমে গেছে তেমনি পানিতে লবণাক্ততাও মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী পানিতে সর্বোচ্চ ২৬০০ এমজি পার লিটার লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। উপকূলীয় এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা ১০০০ এমজি পার লিটার। তবে দেশের অন্যান্য এলাকায় এই পানির গ্রহণযোগ্যতা সর্বোচ্চ ৬০০ এমজি পার লিটার। পানিতে অতিমাত্রায় লবণাক্ততার কারণে উপকূলের লোকজন মিষ্টি পানির খোঁজে অনেক দূর ছুটছে।’
এ ছাড়া আশাশুনি ও শ্যামনগরের কিছু এলাকার গ্রামবাসী বড় বড় ট্যাংকিতে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সারা বছর তা পান করে থাকেন। এবার সেসব পানিতে এরই মধ্যে গ্যাস এবং পোকা দেখা দিয়েছে। ফলে সে পানিও তারা খেতে পারছেন না।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের ৫৭টি সরকারি পুকুর এবং কোন কোন স্থানের বেসরকারি পর্যায়ের পুকুরে পানি রিজার্ভ করে তা গ্রামবাসী খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। এই সব পুকুরে গবাদিপশু নামতে দেওয়া হয় না। এমনকি থালাবাসন ধোয়া ও গোসল করাও নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র পানি তুলে নিয়ে তা ঘরে ঘরে শোধন করে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বৃষ্টি নামলে এ অবস্থার উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তারা।
খুলনা গেজেট/ এস আই