তীব্র সমালোচনার মুখে অনুমোদনের মাত্র দু’দিন পরই স্থগিত করা হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শাখার নতুন কমিটির কার্যক্রম। শনিবার (৩০ ) রাতে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ সুমন হোসেন স্বাক্ষরিত একপত্রে সদ্য অনুমোদিত এই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৮এপ্রিল) শিবির ক্যাডার সদর উপজেলার ভাড়খালী গ্রামের রাজিব ইমরানকে সভাপতি ও হাছানুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের এই আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ সুমন হোসেন কর্তৃক ওই কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার বেরিয়ে আসে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকার তথ্য। বিশেষ করে ওই কমিটির সভাপতি রাজিব ইমরান এর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। সভাপতি রাজিবের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী অবস্থান ও আওয়ামী বিদ্বেষীসহ নানা অভিযোগ উঠে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগে অপরিচিতমুখ রাজিব ইমরানের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটে রীতিমত বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই।
এদিকে ছাত্রলীগেরই বেশ কিছু নেতাকর্মীর দাবি, সভাপতি রাজিব ইমরানের বিরুদ্ধে শিবির সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভে সঞ্চার হয়। জেলা জুড়ে চলে তীব্র সমালোচনা।
অভিযোগ ওঠার পর আলোচনায় এসেছে রাজিব ইমরানের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলের আগের কিছু অ্যাক্টিভিটি। তার ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একটি পোস্টও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে রাজিব ইমরান তার পেজে দা হাতে একটি শিশুর ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে লেখা আছে, ‘আমি লেংটা মনির, নৌকায় ভোট চাইতে আইলে ঠ্যাং কাইট্টা রাইখা দিমু।’
ওই প্রোফাইলে ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি শেয়ার করা আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে লেখা আছে, ‘হালার-পো হালা, আজ তোর একদিন, কি আমার একদিন! ভোট না দিয়ে যাবি কৈ?’
এছাড়া ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কাদের সাহেব, “যারা হেলমেট পড়ে বা মুখ ঢেবে ছাত্রদের মারধর করে এবং লাঠি, চাপাতি নিয়ে পুলিশের সাথে ঘুড়ে বেড়ায় তাদেরকে কি বিএনপি জামাত শিবির বলে, আপনার চাইতে মখা ভাল ছিলো।”
অপরদিকে কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়ার পর শনিবার তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ধন্যবাদ দিলে আপনাকে ছোট করা হবে ভাই, অনেক আগে থেকে আপনার সাথে আমার পরিচয়, সব সময় নিজের ছোট ভাইয়ের মত ভালবাসা দিয়েছেন, ভুলগুলো সব সময় ধরায় দিবেন, আর যে দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন তার সঠিক ব্যবহার যেন করতে পারি তার জন্য দোয়া করবেন।’
এদিকে, ধুলিহর ইউনিয়ন আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বোরহান উদ্দীন, সাধারণ-সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ একাধিক নেতারা দাবি, হাসানুজ্জামান আওয়ামী পরিবারের সন্তান নন। বিগত সময়ে ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে তাকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ-সম্পাদক করে পকেট কমিটি গঠন করেন তৎকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ-সম্পাদক। বিগত সময়ের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ইউপি নির্বাচনে সে প্রকাশ্যে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছিল।
এতসব নানাবিধ অভিযোগের কারনে সদ্য অনুমোদিত ছাত্রলীগের সদর উপজেলার নতুন কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
তবে ছাত্রলীগের সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান এর দাবি, তিনি উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছিলেন, দলের বিপক্ষে নয়। ওই ঘটনাকে পুঁজি করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা নানা রকম অবান্তর তথ্য ছড়াচ্ছে।
এতসব অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য অনুমোদিত কমিটির সভাপতি রাজিব ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
খুলনা গেজেট/ এস আই