পূর্বের বিয়ের ঘটনা না জানিয়ে মন্দিরা মজুমদারের সাথে ভালবাসার অভিনয় করেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার। পরে ওই কর্তাকর্তার আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে একাধিকবার রাত্রিযাপন করে মন্দিরার সাথে।
আগের বিয়ের ঘটনাটি জেনে যাওয়ায় শিক্ষানবিশ চিকিৎসক তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই রাজি হয় না সুহাস। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে মান সম্মান রক্ষার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় মন্দিরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের শয়নকক্ষের সিলিং ফ্যানের হুকের সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে মন্দিরা । এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা ডা: সুহাস রঞ্জন হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করেন মৃতের বাবা। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক।
এজাহারে বর্ণিত সূত্র থেকে জানা গেছে, গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় মন্দিরা মজুমদার (২৬) । মজিদ স্মরণীর ৮৮/১ এর বাড়িতে থেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকে সে। এর আগে একই বছরের ৩০ এপ্রিল মন্দিরার পিতা প্রদীপ মজুমদার পিত্তথলি সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। যার অপারেশনের দায়িত্ব পড়ে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট সংযুক্ত কেএমসি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা সুহাস রঞ্জন হালদারের ওপর। মেয়ে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হওয়ায় উভয়ের মধ্যে পরিচিতি হয়।
কিন্তু চতুর সুহাস রঞ্জন হালদার পূর্বে বিয়ের ঘটনাটি না জানিয়ে প্রেম নিবেদন করলে মন্দিরা সেটি গ্রহণ করে। ওই কর্মকর্তা সিথি রানী হালদার নামে নিকট আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে গিয়ে একাধিকবার রাত্রিযাপন করে মন্দিরা সাথে। পরে সুহাসের বিয়ের বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। মেডিকেল কর্মকর্তা মন্দিরাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। পুনরায় বিয়ের প্রস্তাব দিলে তাকে হত্যাসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ১৫ নভেম্বর বেড়ানোর কথা বলে মন্দিরা মজুমদারকে মোটরসাইকেল যোগে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যায় সুহাস রঞ্জন। বিয়ের কথা বললে তাকে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে মন্দিরা।
মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মন্দিরা মজুমদার নিজের শয়ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে ফ্যানের হুকের সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। বাবা প্রদীপ মজুমদার বাইরে থেকে ফিরে এসে মেয়েকে ডাকাডাকি করে কোন সাড়া না পেয়ে বাড়ির মালিকের মাকে ঘটনাটি জানান। পরে দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের বাবা খুমেক এর আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা সুহাস রঞ্জন হালদার ও সিথি রানী হালদারের নাম উল্লেখ করে সোনাডাঙ্গা থানা আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে এজাহার দায়ের করেন, যার নং ২১।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক বলেন, মন্দিরা ও সুহাস রঞ্জন উভয় চিকিৎসক। তাদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক ছিল। মেডিকেল কর্মকর্তা সুহাস বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে মন্দিরা আত্মহত্যা করে। রাতে সুরাতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ প্রেরণ করা হয়। শুক্রবার সকালে আত্মহত্যা প্ররোচণার অভিযোগ এনে মৃতের বাবা মামলা করেছেন। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই