খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন
বিচার কার্যক্রমে ধীর গতি ন্যয় বিচার নিয়ে হতাশায় নিহতের পরিবার

সাতক্ষীরার রায়হান হত্যা মামলার চার্জশীট থেকে ৩৪ জনকে অব্যহতি

নিজস্ব প্রতি‌বেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হানকে জবাই করে হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত ৭৭ জন আসামির মধ্যে ৩৪ জনকে অভিযোগ গঠনকালে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। আদালতে অভিযোগ গঠনের ১০ মাস পর সাক্ষী গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হলেও মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে ধীর গতিতে। এমতাবস্থায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় ভুগছেন নিহতের স্বজনরা।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আবু রায়হান (৪৬) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের রকিব গাজীর ছেলে।

আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা জানান, প্রথম দফার মহাজোট সরকারের শেষের দিকে বিশেষ করে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার পর দেবহাটা এলাকায় জামায়াত শিবির নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তার অবস্থানের ফলে পারুলিয়া বাজার এলাকায় জামায়াত-শিবির আঙুল তুলে কথা বলতে পারতো না। এসময় আওয়ামী সংগঠণের মধ্যে ভয় ঢোকাতে কয়েক মাস আগে তারা যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন রতনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় মামলা না করায় আওয়ামী লীগের দুর্বলতা হিসেবে ওই দলের সাধারণ নেতা কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়।

একপর্যায়ে কুলিয়া, গরানবাড়িয়া, আস্কারপুর, চালতেবেড়ে, কালীগঞ্জের ইন্দ্রনগর, সন্ন্যাসীর চক ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকার কয়েকজন জামায়াত শিবিরের নেতারা গোপন বৈঠক করে রায়হানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বৈঠকে রায়হান দেবহাটার অপ্রতিরোধ্য হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে যেকোন মূল্যে সরিয়ে দেওয়ার নীল নকশা তৈরি করে। ওই সময়ে তারা রায়হানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ভাঙচুর করে। এরই জের ধরে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে পারুলিয়া বাসস্টান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মোমেনা বস্ত্রালয়ের সামনে কয়েকশ’ লোকের উপস্থিতিতে জামায়াত, শিবির নেতা কর্মীরা ফিল্মি স্টাইলে রায়হানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে। এঘটনায় কর্তব্য অবহেলার দায়ে ২২ নভেম্বর দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেরামত আলীকে প্রত্যাহার করা হয়। পরদিন নিহতের মা জাহানারা খাতুন বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে দেবহাটা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কয়েক দিনের মধ্যে পুলিশ দেবহাটার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৩০ জনেরও বেশি জামায়াত-শিবির ও বিএনপি’র নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, রায়হান হত্যা মামলায় পারুলিয়া গ্রামের সামছুল গাজীর ছেলে ইব্রাহীম হোসেন ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর ও কোড়া গ্রামের আকবর আলী সরদারের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন সাতক্ষীরা বিচারিক হাকিম গোলাম নবীর কাছে রায়হান হত্যাকান্ডে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পর্যায়ক্রমে নয় জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়ে ১০ম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে দেবহাটা থানার উপপরিদর্শক উজ্জল কুমার দত্ত ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে নয়জন পলাতক রয়েছে। পরে মামলাটি বিচারের জন্য সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী এড. অজয় কুমার সরকার ও মুক্তিযোদ্ধা এড. ইউনুছ আলী জানান, করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে মামলার গতি মন্থর হয়ে যায়। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য করা হয়। মামলা থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য ৫৭ জন আবেদন করেন। ধার্যদিনে উভয়পক্ষের শুনানী শেষে সকল আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে বলে তারা জানতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ কজ লিস্টে তারিখ না পড়ায় ও অভিযোগ গঠন সম্পর্কে জানতে না পারায় তারা দুশ্চিন্তায় ছিলেন।

মামলার কার্যক্রমে যথাযথ অগ্রগতি না হওয়ায় জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০ মার্চ মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বদলী হয়ে আসার কয়েকদিন পর তারা জানতে পারেন যে, অভিযোগ, গঠনের সময় ৩৪ জন আসামিকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ গঠনের ১০ মাস পর আগামি ১৮ জুলাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়। যথাসময়ে আসামিদের অব্যহতির বিষয়টি জানতে না পারায় তারা ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে পারেননি। ফলে নিহতের পরিবার ও আইনজীবীরা এ মামলায় ন্যয় বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় ভুগছেন।

জানতে চাইলে নিহত আবু রায়হানের স্ত্রী শাহীনা খাতুন বলেন, একটি স্পর্শকাতর হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনে ৩৪ জনকে অব্যহতি দেওয়ার ১০ মাস পর সাক্ষীর জন্য দিন পড়েছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। তার স্বামী আবু রায়হানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা মামলায় এ অবস্থা হলে সাধারণ মানুষের বেলায় কি হবে?

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতের অতিরিক্ত পিপি এড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, শুধু এ মামলা নয়, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ম আদালতে থেকে সম্প্রতি স্থানান্তর হওয়া ১৭০টি মামলার কার্যক্রম যাতে দ্রুত চলে সেজন্য রাষ্ট্রপক্ষ তৎপর থাকবে। ৩৪ জনকে অব্যহতি দেওয়ার ব্যাপারে কোন আইনগত দিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!