সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১২নং বল্লী ইউনিয়নের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র উপকারভোগী তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সরকারি বিক্রি সংস্থা (টিসিবি)’র তালিকাভুক্ত প্রতিটি পরিবার হ্রাসকৃত মূল্যে দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি মসুর ডাল পাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিসিবি’র তালিকাভুক্ত এসব পরিবার রমজানের আগে একবার প্রতি লিটার ১১০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে দুই কেজি চিনি, প্রতি কেজি ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল পাবে। আবার রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত একই পরিমাণ পণ্য আরেক দফা দেয়া হবে ওই পরিবারগুলোকে। তবে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তালিকায় উপকারভোগী হিসেবে অন্তর্ভূক্তির জন্য সরকারী নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানা হয়নি সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নে।
স্থানীয় মেম্বর ও চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন লোকজনকে তালিকাভুক্ত করে উপকারভোগীদের তালিকা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। সেই তালিকা অনুযায়ি বল্লী ইউনিয়নে ৬০৮টি পরিবার হ্রাসকৃত মূল্যে টিসিবির পণ্য পাবেন। বল্লী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বররা নিজেদের ইচ্ছেমতো স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজস্ব লোকজনদের তালিকাভুক্ত করে সরকারের একটি জনহিতকর মহৎ কাজকে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বল্লী ইউনিয়নে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অতি দরিদ্র লোকদের তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদে বসেই টিসিবির উপকারভোগীদের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। তালিকায় একই পরিবারের একাধিক সদস্য, সরকারি চাকরিজীবী, অর্ধশত বিঘা জমির মালিক, পাকা ভবনের মালিক, মেম্বার-চেয়ারম্যানদের আত্মীয়-স্বজন, স্বচ্ছল ও সরকারি সুবিধাভোগী লোকজনদের উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য ইউনিয়নে গরীব লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপকারভোগী যাচাই-বাচাই করা হলেও বল্লী ইউনিয়নে সেটা করা হয়নি। ফলে ৪নং ওর্য়াডের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়ার ছেলে আমতলা খানজিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মেহেদী হাসান, ঘরচালা গ্রামের মৃত হযরত সরদারের ছেলে অর্ধশত বিঘা জমির মালিক ইউনুস সরদার, একতলা বাড়ি ও বাজারে তিনটি দোকানের মালিক সুরমান আলী, মৃত লেয়াকতের ছেলে ১৫ বিঘা জমিসহ পাঁকা বাড়ির মালিক রবিউল ইসলামসহ এমন অনেকের নাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বরদের অনুগত লোকজন হিসাবে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠি আসন্ন রমজান মাসে ন্যায্য মূল্যে সরকারী পণ্য ক্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন আ’লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, বল্লী ইউনিয়নে টিসিবি’র তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা তাদের অনুগত লোকজনকে টিসিবি’র উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। এর ফলে হকদার প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠি সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এবিষয়ে বল্লী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিতুল ইসলাম তার ইউনিয়নে হ্রাসকৃত মূল্যে টিসিবি’র পণ্য ক্রয়ে সুবিধাভোগিদের তালিকা তৈরীতে কোন অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন। তবে সরকারি চাকরিজীবী ও অর্ধশত বিঘার জমির মালিক তাদের পেশা দিনমজুর দেখিয়ে কীভাবে তালিকাভুক্ত হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি এসময় বলেন কাজ করলে ভুল হবে।
এবিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নাম গুলো পেলে তদন্ত করে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
টিসিবি’র পণ্য ক্রয়ে সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগটি তদন্তের জন্য এলাকার হতদরিদ্র বঞ্চিত ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খুলনা গেজেট/এএ