খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
ভূমিহীনদের উচ্ছেদ কেন অবৈধ হবে না জানাতে বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট

দেবহাটায় বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত ৬ মাসের জন্য স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিশাখালির ১৩১৮ বিঘা জমিতে বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করা কেন অবৈধ হবে না তা চার সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। একইসাথে গত ২৯ নভেম্বরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলরুজ্জামান এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত রোববার শেখ মুজিবনগর খলিষাখালি ভূমিহীন আবাসন প্রকল্প’ এর সভাপতি আনোয়ারুল ইসলামের রিট পিটিশনের শুনানী শেষে এ আদেশ দেন।

মামলায় ভূমি সচীব, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার, দেবহাটা উপজেলা র্বিাহী কর্মকর্তা, দেবহাটা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও পারুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট পিটিশনের বিবরণে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী কোন এক সময়ে পারুলিয়া মৌজার ৪৩৯.২০ একর জমি ফেলে রেখে চন্ডিচরণ ঘোষ ও তার ওয়ারেশনগণ ভারতে চলে যান। ওই জমি ১৯৫৩ সালের ৪ মার্চ কলিকাতা সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের ৬৯৪ নং রেজিষ্ট্রি বিনিময় দলিল মূলে ও নিলাম খরিদ মূলে দাবি করে আসছিলেন আব্দুল মালেকসহ কয়েকজন। সরকারি খাল বিল হিসেবে কিছু জমি থাকলেও ওই জমি এসএ রেকর্ডে মালিকানা দেখানো হয়। ওই জমি জনস্বার্থে খাস করে রিসিভার নিয়োগের জন্য দেবহাটার মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর সাতক্ষীরার যুগ্ম জজ দ্বিতীয় আদালতে ১৮/১০ নং দেওয়ানী (টাইটেল স্যুট) মামলা করেন। এর পাশাপাশি এসএ রেকর্ড সংশোধন ও বন্টননামার জন্য একই আদালতে চাঁদপুরের সুনীল স্বর্ণকার, গোবিন্দ সরদার ও ফজর আলীসহ ছয়জন দেঃ ১০/১০ মামলা করেন। জমির মালিকদের বিনিময় দলিলের ৬১,৬২ ও ৬৩ পাতায় সাবেক ১৮১২ খতিয়ানের জমির বিবরনের হাতের লেখার সঙ্গে অন্যসব পাতার লেখা ভিন্ন ও বেশকয়েকজন বিবাদী নিলাম ক্রয়ের মূল কাগজপত্র জমা না দিয়ে ফটোকপি জমা দেওয়া, জনস্বার্থে ব্যবহৃত খাল বিলের খাজনা আদায় না হওয়ায় নিলাম সংক্রান্ত বিষয়টি মহামান্য হাইকোর্টের ১৯৫০ সালের একুইজিসান এন্ড টেনেন্সি এ্যক্ট অনুযায়ি এসএ রেকর্ড ভুল বলে মনে করেন যুগ্ম জেলা জজ এএইচএম মাহমুদুর রহমান। সে অনুযায়ি ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি ওই জমি খাস সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করে অ্যাড. কুন্ডুু চৌধুরী বিকাশ ও অ্যাড. আশরাফুল আলম বাবুকে রিসিভার নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে সহযোগতিার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ আদেশের বিরুদ্ধে কাজী গোলাম ওয়ারেশসহ জমির মালিক দাবিদারগন মহামান্য হাইকোর্টে ২১৬/১২ রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন। শুনানী মেষে ২০১৬ সালের ১০ আগষ্ট আদালত ওই জমি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে মর্মে উলে¬খ করে ভূমি মন্ত্রণালয় ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে ওই জমি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আইনানুয়ারি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে কাজী গোলাম ওয়ারেশ ও জমির মালিক দাবিদারগণ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে ২৫৬৮/১৭ আপিল মামলা করেন। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি আদালত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। কাজী গোলাম ওয়ারেশ , ডাঃ নজরুল ইসলাম ও জমির মালিক দাবিদাররা ওই আদেশ পূণঃ বিবেচনার জন্য গত বছরের ৮ এপ্রিল মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে ১৬৮/২১নং সিভিল রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন। যাহা আজো শুনানীর অপেক্ষায়। এরই মধ্যে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর খলিশাখালির ওই জমিতে সাপমারা খালের দু’পাশে বসবসাসরত ও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত সাত শতাধিক ভূমিহীন পরিবার বসব্সা শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে জমির মালিকানা দাবিদাররা এ পর্যন্ত ২২টি মামলা করে। বর্তমানে খলিশাখালির ওই জনপদটি “শেখ মুজিবনগর খলিষাখালি ভূমিহীন আবাসন প্রকল্প” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

পিটিশনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ২৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ সভার রেজুলেশনে সরকারি কৌশুলী অ্যাড. শম্ভুনাথ সিংহ ওই জমি মালিকদের উলে¬খ করে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান আলোচনাসভায় মহামামন্য সুপ্রিম কোর্টে সিভিল রিভিউ পিটিশন ১৬৮/২১ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ না করার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর“ খলিশখালি নামক স্থানে ৪৩৯.২০ একর সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি, খাস সম্পত্তি নয়। এই জমি অবৈধ দখলদারদের খালি করতে হবে। নইলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে” বলে উলে¬খ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন ছিদ্দিকী ওই জমিতে বসবাসরত ভূমিহীনদের উঠে যাওয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে মাইকিং করেন। একইভাবে ভূমিহীনদের উচ্ছেদের জন্য এক প্লাটুন মহিলা পুলিশসহ দু’ প্লাটুন পুলিশ চেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন ভূমিহীনদের পক্ষে স্তানীয় সংগঠণের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মহামান্য হাইকোর্টে ১৫০০/২২ নং রিট পিটিশন দাখিল করেন। গত ২৭ ফেব্রæয়ারি ভূমিহীনদের পক্ষে ব্যারিষ্টার ইমরুল হায়দার এক রিট পিটিশনের শুনানী করেন।

এদিকে ভূমিহীন আন্দোলনের অন্যতম নেতা অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, ডাঃ নজরুল ইসলাম, কাজী গোলাম ওয়ারেশসহ বেশ কয়েকজন খলিশাখালির ১৩১৮ বিঘা জমি কাগজপত্র মূলে তাদের দাবি করলেও সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ-২য় আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট ওই জমির মালিকদের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। ফলে তারা সুপ্রিম কোর্টে সিভিল রিভিউ করেছে। এরপরও জমি তাদের বলে দাবি করা আইনের ব্যত্তয় ঘটানো ছাড়া কিছু নয়। তাছাড়া সরকারি জমি নিজেরা মালিক সেজে ওই সব জমির দাবিদারগন অন্যত্র ইজারা দিয়ে ১৯৫৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াইশত কোটি টাকা লুটপাট করেছে মর্মে সাবেক জিপি অ্যাড. গাজী লুৎফর রহমান জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!