সন্তান হারানোর শোকে মুহ্যমান ইব্রাহীম হাওলাদার। পাগলের মতো প্রলাপ বকছেন তিনি। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য মানুষের কাছে আকুতি করছেন। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুর্বৃত্তের ইটের আঘাতে নির্মমভাবে মৃত্যু হয় তার একমাত্র সন্তান শুভ হাওলাদারের। এখনও পর্যন্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এলাকা থেকে কয়েকজনকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে।
সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় ফেজের ১৪ নং সড়কের শেষ সীমানায় বালুর মাঠের পাশে অশোক সরকারের বাসভবন। ওই ভবনের পাশে রয়েছে একটি ফাঁকা মাঠ। মাঠের তিন প্রান্তে দেয়াল ও সম্মুখে লোহার গ্রিল। ওই মাঠে রয়েছে মাদকের আখড়া। মাঠের চারপাশে মাদকের ব্যবহৃত উপকরণ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এমনকি শুভর পায়ের পাশে সলিউশন আঠার একটি পরিত্যাক্ত কৌটা সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে কি কারণে, কারা তাকে হত্যা করল? এ বিষয় নিয়ে সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা এলাকার প্রতিটি মানুষের মনকে নাড়া দিচ্ছে। কারণ সকলের কাছে অতি আদরের ছিল নিহত শুভ।
শুভর বাবা ইব্রাহীম হাওলাদার পেশায় একজন ভাঙ্গাড়ী ব্যবসায়ী। বয়রা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সিএন্ডবি কলোনি) দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। প্রতিদিন কুড়ি টাকা নিয়ে মিন্টুর দোকানে নাস্তা করত। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
শুভর বাবা জানান, নাস্তা সেরে শুভ আজ তাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলে। দুপুর দেড়টার দিকে ফোন করে বাড়ি দ্রুত ফিরে আসার জন্য জানানো হয়। তিনি ফিরে এসে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে অনেক মানুষের উপস্থিতি ও চোখের পানি দেখে আর বুঝতে বাকি রইলনা যে তার শুভ এ দুনিয়াতে নেই। এ এলাকায় অনেকদিন ধরে বসবাস। কারও সাথে দু’ঠোট এক করেনি তিনি। কোন শত্রু নেই তার। “কেন আমার মাসুম বাচ্চাকে দুনিয়া থেকে এভাবে অকালে ঝরে পাড়তে হল। কোন কারণ ছাড়াই আমার সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।” এ আকুতি বাবার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন জানান, মাঠে মাদকের বিকিকিনি চলে। এখানে কখনও পুলিশের কোন উপস্থিতি দেখা যায়না। পুলিশের পাহারা জোরদার থাকলে আজ শুভকে এভাবে অকালে মরতে হতো না।
তারা আরও জানান, পুলিশ অশোক সরকারের বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এলাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মফিজ ও বাবু ওরফে স্টিক বাবুকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়েছে।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক জানান, আসামিদের শনাক্তকরণের চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলের ফুটেজগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এ হত্যা রহস্য সবার সামনে অতি দ্রুত উন্মোচন করা হবে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
যেভাবে পাওয়া গেল শুভর মৃতদেহ
রোববার সাড়ে ১১ টার দিকে স্থানীয় শিশুরা বালুর মাঠে বল খেলছিল। বলটি সাড়ে ১২ টার দিকে ওই ফাঁকা মাঠে গেলে কুড়াতে গিয়ে এক শিশু শুভর রক্তাক্ত নিথর দেহ মাঠে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করতে থাকে। পরে এলাকাবাসি ছুটে এসে লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। সুরাতহাল রির্পোট তৈরি করে লাশ মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।
খুলনা গেজেট/ এস আই