দেশে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। একই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ইতিমধ্যে দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।
গত বৃহস্পতিবার থেকে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও সাতক্ষীরায় কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এমন পরিস্থিতে জেলায় করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সচেতন নাগরিকদের।
সরকারিভাবে আরোপিত ১১দফা বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে মাস্ক পরতে হবে, সভা-সমাবেশ ও ধমীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। কেউ না মানলে তাঁকে জেল-জরিমানার মুখে পড়তে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু সাতক্ষীরায় কোথায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসনের নজরদারি এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, শহরের নিউ মার্কেট, খুলনা রোড মোড়, সুলতানপুর বড় বাজার, কাটিয়া টাউন বাজার, কদমতলা বাজার, পুরাতন সাতক্ষীরা বাজার, আমতলা মোড়স্থ জেলা শিক্ষা অফিসের সামনেসহ সব জায়গাতেই দিনের অধিকাংশ সময় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে চলাচলকারি অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছেন। এমনকি সাতক্ষীরা শহরের আমতলা মোড়ে জেলা শিক্ষা অফিসে টিকা নিতে আসা স্কুল শিক্ষার্থীদের কারো মুখে মাস্ক নেই।
শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড গাদাগাদির মধ্যে লাইনে দাড়িয়ে আছে টিকা গ্রহণের জন্য। এসময় ছিল না কোন সামাজিক দূরত্ব। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এছাড়া স্কুলের শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসে পাঠদান চলছে। শিক্ষার্থী, এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীদের মুখেও নেই মাস্ক। নির্দেশনায় থাকলেও নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা। মাপা হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা।
সাতক্ষীরা শহরের ভ্যান চালক মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা পরিশ্রম করি তাই আমাদের করোনা হবে না। সরকার বলেছে মাস্ক পরতে, তাই সঙ্গে রেখেছি। আমরা দিন আনি দিন খাই। পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হতে হয়। বিধিনিষেধ মানার চেষ্টা করলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় ভুলে যাই। এ ছাড়া শিক্ষিত যাত্রীরাও মাস্ক পরেন না বলে জানান তিনি।
সুলতানপুর কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসেন মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিধিনিষেধ তো দুই বছর ধরে দেখছি, শুনছি। করোনা এই কমে তো, এই বাড়ে। করোনা কবে যাবে তার ঠিক নেই। নিজে নিরাপদ থাকতে চাই। তবুও অনেক সময় অজান্তেই মাস্ক পরা হয় না।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক নেতা অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী জেলা। প্রতিনিয়ত ভারত থেকে লোকজন আসা যাওয়া করছে। এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতন হওয়া খুবই জরুরী। করোনার সংক্রমন রোধে সবাইকে মুখে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মনে চলাচল করতে হবে। না হলে দেশের রেড জোন ঢাকা ও চট্রগ্রামের মত সাতক্ষীরার অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে তিনি জেলা নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানান।
সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়াত বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। যাঁরা টিকা নিয়েছেন, আর যারা এখনো নেননি, প্রত্যেকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। সর্বত্রে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনার একটি বিধি। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না। নতুন করে সাতক্ষীরায় ১১জন শনাক্ত হয়েছেন যার মধ্যে ৩ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এব্যপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক করা হচ্ছে পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই