১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় মোংলা ও সুন্দরবন এলাকা। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাক বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে এই এলাকা স্বাধীন করেন উপকূলীয় এ অঞ্চলের বীর মুক্তিসেনারা। পাক সেনাদের তাড়িয়ে উড়ানো হয়েছিল স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা।
মোংলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফকির আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম. এ জলিল, সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ ও কবির আহমেদ মধুর নেতৃত্বে এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা সুন্দরবনে ৫ টি ক্যাম্প স্থাপন করে। এসময় সুন্দরবন ইউনিয়নের দামেরখন্ড এলাকায় চলছিল পাক বাহিনীর নেতৃত্বে নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার, নারী নির্যাতন ও গণহত্যা। কোন কিছু না বুঝে ওঠার আগেই এই এলাকার কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার রজ্জব আলী ফকিরসহ তার সহযোগীদের নির্দেশে অনেক যুবতী ও গৃহবঁধূকে তুলে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। তার মধ্যে এলাকার গৃহবধূ তরুলতা শীল নামের একজনকে ধরে নিয়ে আটকে রাখে প্রায় সাড়ে ৩ মাস। এসময়কালে প্রতিদিন রাত তার উপর চলে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। এমন দুঃসহ স্মৃতির কথা এ প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন অজিৎ কুমার প্রামানিকের স্ত্রী তরুলতা শীল। সেই স্মৃতি আর কষ্টের কথা বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন এই বীরঙ্গনা নারী।
সেনা কর্মকর্তাদের তত্বাবধানে সুন্দরবনের ক্যাম্পগুলোতে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। আর সুবিধা বুঝে আক্রমণ করা হতো। ৭ ডিসেম্বর মোংলা ও সুন্দরবনের সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। হানাদার মুক্ত হয় মোংলাসহ সুন্দরবনের আশপাশের এলাকা।
মোংলা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান বলেন, ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে পাক হানাদার বাহিনী মোংলা ও সুন্দরবন অঞ্চলে প্রবেশ করে। বিভিন্ন সূত্র থেকে হানাদার বাহিনীর তৎপরতার খবর জানতে পেরে কৌশল অবলম্বন করি আমরা। হানাদার বাহিনীর অবস্থান শনাক্ত করে সেখানে সম্মুখ যুদ্ধ করি। এক পর্যায়ে মোংলা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় পাকিস্থানী বাহিনী। এভাবেই ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় মোংলা ও সুন্দরবন এলাকা।
খুলনা গেজেট/ এস আই