খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৭ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

কপোতাক্ষের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে অসংখ্য স্থাপনা

পাইকগাছা প্রতিনিধি

নদীর প্রতি অসীম ভালবাসা, নদীর প্রতি অজস্র আবেগের গুচ্ছমালায় কবি সাহিত্যিকরা অসংখ্য কবিতা,গান কিংবা সাহিত্য রচনা করে গেলেও সেই নদীর প্রতি ভাবাবেগে আজ যেন চিঁড় ধরেছে। নদী শাষন-শোষনে একে একে হারিয়ে যেতে বসেছে নদী মাতৃক বাংলাদেশের নদীমালা। যার ধারাবাহিকতায় বেশ আগেই যুক্ত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ নদ।

প্রথমে আগ্রাসী কপোতাক্ষের ভাঙ্গন ও পরে নাব্যতা হ্রাসে নদী তীরে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার উপর পড়ে বিরুপ প্রভাব। এরপর গণদাবির প্রেক্ষিতে সরকার ২৬২ কোটি টাকা ব্যায়ে কপোতাক্ষ খনন করে। নদ ফিরে পায় তার হারানো যৌবন। তবে ফের কপোতাক্ষের অব্যাহত ভাঙ্গনে নতুন করে উদ্বাস্তু হচ্ছে নদী তীরে বসবাসকারী বহু পরিবার। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের বহু উন্নয়ন প্রকল্প। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে মুজিব শত বর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীন বহু পরিবারের পুণর্বাসনে গড়া আবাসন প্রকল্পসহ হাট-বাজার, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ইতোমধ্যে কপোতাক্ষের পাইকগাছার কপিলমুনি ইউনিয়নের কাশিমনগর হাট-বাজার, মসজিদ, দোকান ও মুজিব শত বর্ষের ভূমিহীনদের আবাসন প্রকল্প চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। কপোতাক্ষ পাড়ের বনায়ন প্রকল্পের সিংহভাগ গাছ ইতোমধ্যে গিলে খেয়েছে আগ্রাসী কপোতাক্ষ। নতুন মাছ কাটা থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ী ঘাট, হাট-বাজার, গোলাবাটিসহ রাড়ুলী ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন ফের ব্যাপক আকার ধারণ করছে।

ইতোমধ্যে সেখানকার জেলে পল্লীর অন্তত ৭০ টি পরিবার ভাঙ্গনের মুখে অন্যত্র চলে গেছে। নদীগর্ভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে আরো ২০ টি পরিবারের বসত ভিটা। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সেখানকার চলাচলের একমাত্র রাস্তার দুই তৃতীয়াংশ। জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্যও সেখানে নেই কোন বাঁধ। ফলে প্রতি অমাবশ্যা-পূর্নিমায় জোয়ারে পানি বাড়লে এলাকায় লবণ পানিতে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, ফসলি জমি ও কাঁচা-পাকা ঘর-বাড়ি। এছাড়া ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে বোয়ালিয়া জেলে পাড়া, রামনাথপুরসহ কপোতাক্ষের বিভিন্ন এলাকা।

এব্যাপারে কথা হয় কপিলমুনির কাশিমনগর জেলে পল্লীর বাসিন্দা উত্তম বিশ্বাসের সাথে। তিনি জানান, এক শ’ বছরেরও বেশী সময় ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসছেন। তবে ইতোমধ্যে তাদেরসহ বহু পরিবারের মূল বসত-ভিটা গিলে খেয়েছে আগ্রাসী কপোতাক্ষ। অনেকেই পেশা বদলে অন্যত্র চলে গেছে। উদ্বাস্তু হয়েছে অনেক পরিবার।

রাড়ুলীর জেলে পল্লীর বাসিন্দা ভূধর বিশ্বাস জানান, তার বাবা ও দাদুরা প্রায় ১শ’ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন। নদীর কুলে ১শ’ থেকে দেড়শ বিঘা জমি ছিলো। যেখানে দেড় শ’রও বেশি পরিবারের বসবাস ছিল। তবে অব্যাহত ভাঙ্গনের মুখে সেখানকার ৭০ টিরও বেশি পরিবারের ঘর কেড়ে নিয়েছে আগ্রাসী কপোতাক্ষ। যাদের অনেকেই অন্যত্র জমি কিনে পুণর্বাসিত হয়েছে, কারো বা আশ্রয় হয়েছে রাস্তার পাশে কেউবা উঠেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে।

রাড়ুলীর ইউপি চেয়ারম্যান সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত প্রায় ৪০ বছর ধরে সেখানে কপোতাক্ষের ভাঙ্গন শুরু হলেও সরকার ভাঙ্গনরোধে তেমন কোন বরাদ্দ দেয়নি। তিনি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় একাধিকবার বিষয়টি উত্থাপন করলেও কোন কাজ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যর সাথে কথা বলবেন বলেও তিনি জানান।

কাশিমনগর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম বলেন, কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গনে নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বনাপ্রকল্প, হাট-বাজারের সিংহ ভাগ ইতোমধ্যে কপোতাক্ষে বিলীণ হয়েছে। নতুন করে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় আশ্রয়ন প্রকল্প, মসজিদ, শ্মশানঘাট, নির্মাণাধীন গ্রামীণ মার্কেটসহ নদী তীরের বহু বসতবাড়ি। এব্যাপারে তিনি জরুরী ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকরী প্রকৌশলী রাজু আহম্মদ বলেন, তাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ভাঙ্গন কবলিত রাড়ুলী, বোয়ালিয়া, রামনাথপুরসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জরিপকাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ হলেই কার্যক্রম শুরু হবে।

কপোতাক্ষ অববাহিকার সাধারণ মানুষের দু:খ-দূর্দশা ও যাপিত জীবনের দু:খ গাথা নিয়ে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন এনজিও’র ছায়াতলে নানামুখী আন্দোলন হয়েছে। নির্মিত হয়েছে স্বল্প দৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র কপোতাক্ষের কান্না। স্বাধীনতা পরবর্তী বারবার সরকারের পট পরিবর্তন হলেও কার্যত কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষ কিংবা কপোতাক্ষের ভাগ্যোন্নয়নে দৃশ্যত কাজ করেনি কেউ। এব্যাপারে কপোতাক্ষের ভাঙ্গনরোধে জনপদের সাধারণ মানুষ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!