সুন্দরবনের দুবলারচরে রাসমেলা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই রাসপূজা ও পুণ্যস্নানের জন্য যেতে পারবেন সেখানে। সর্বশেষ অন্য ধর্মের অনুসারীদের দুবলারচরে যাওয়া সীমিত করা হয়েছে। গত সোমবার(৮ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন ১০টি জেলার প্রশাসকদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সুন্দরবনের দুবলারচরে এই রাসপূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সে অনুযায়ী এ বছরের চলতি মাসের ১৭ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত স্বাড়ম্বরে এ মেলা হওয়ার কথা ছিল। তবে এবার নতুন ওই নির্দেশনার ফলে রাস পূজা চললেও মেলা অনুষ্ঠিত হবে না। প্রতিবছর প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ রাস মেলায় অংশ নিতেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় আড়াই শ বছর আগে যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের শাসনামলে ওই মেলা চালু হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যাঁরা কৃষ্ণের অনুসারী তাঁরা এই দিনটি রাধা ও কৃষ্ণের বিহারের সময় হিসেবে ওই পূজা ও মেলা শুরু করেন।
তবে মেলা কেন্দ্র করে গণমানুষের সমাগমে সুন্দরবনের অপূরনীয় ক্ষতি হয়। মেলা চলাকালে প্রচুর হরিণ শিকার ও বৃক্ষ নিধন করা হয়। পাশাপাশি মানুষের ফেলে যাওয়া বর্জ্যে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
এর আগে বন বিভাগ থেকে সুন্দরবনের এসব ক্ষতির বিষয় উল্লেখ করে তা নিয়ন্ত্রণে অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত তা আলোর মুখ দেখেনি। আর তাই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কাছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় মেলাটি বন্ধের অনুরোধ জানায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। সেখানে ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা ও পুণ্যস্নান চালু রাখা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে রাসমেলা ২০২১ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং এ সময়ে পুণ্যার্থী বা তীর্থযাত্রী সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্যরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেক্ষ্য, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের বাগেরহাটে মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে দুবলারচরে প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ বা অগ্রহায়ণের শুরুতে শুক্লপক্ষের পূর্ণিমায় রাসমেলা বসে। সেখানে সব সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়।
এ ব্যাপারে খুলনার সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কাদির জানান, রাসমেলা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও সেখানে প্রায় সকল ধর্মের মানুষের সমাগম ঘটে। যার ফলে গণমানুষের আগমনে সুন্দরবনের অপূরনীয় ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। তবে দুবলারচরে রাসমেলা বন্ধ করা হলেও তা খুলনা বা বাগেরহাটের আশপাশের কোনো এলাকায় চালু করা যেতে পারে ।
তিনি আরো জানান, এমনিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় প্রতিবছরই সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। সর্বশেষ সুন্দরবনের কোন প্রকার ক্ষতি হয় কাউকেই এমন কোন কাজ করতে দেওয়া উচিত হবেনা বলেও জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এএ