সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকর মেলা চলাকালে স্থানীয় স্টেডিয়ামে ও শহরের রক্সি সিনেমা হলে পৃথকভাবে দু’টি শক্তি বোমা হামলার ১৯ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এই দিনে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মাত্র দশ মিনিটের ব্যবধানে দুটি শক্তিশালী বোমা বিষ্ফোরনের ঘটনায় ৫০ জনের অধিক ব্যক্তি আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর অহত তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে মারা যান।
প্রতিবছরের ন্যায় ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শহর জুড়ে চলছিল সাতক্ষীরার চিরায়ত ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুর মেলা। সহা¯্রাধিক নারী-পুরুষের সরব পদচারনায় শহরের মেলাঙ্গন যখন মুখরিত তখন সাতক্ষীরা পলাশপোলস্থ জেলা ষ্টেডিয়ামে দি লায়ন সার্কাস আর রকসি হলে চলছিল সিনেমা শো।
এমন এক আনন্দঘন মুহূর্তে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মাত্র দশ মিনিটের ব্যবধানে এই দুটি স্থানের জনাকীর্ন অনুষ্ঠানে পড়ে বোমার আঘাত। মুহূর্তেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় সবকিছু। দিগবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে মানুষ শুধুই ছুটতে থাকে। বিদ্যুতহীন এক ভৌতিক তান্ডবের মধ্যে কানে আসে শুধুই আর্তনাদ। এই সন্ত্রাসী তান্ডবে কমপক্ষে ৫০ জন নারী-পুরুষ গুরুতর আহত হয়।
পরদিন রাত পোহাতেই সাতক্ষীরা পৌঁছান তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব মোঃ মোদাব্বির, বানিজ্য উপদেষ্টা ও সাতক্ষীরা জেলা মন্ত্রী বরকতুলল্লাহ বুলু, খুলনার মেয়র শেখ তৈয়েবুর রহমান প্রমুখ। রুদ্ধদ্বার কক্ষে বৈঠক করে তারা বলেন এতে কেউই মারা যায়নি। বরং কিছু পত্রিকা চার দলীয় জোট সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে তিনজন নিহতের মিথ্যা প্রচার দিয়েছে।
তবে পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঢাকার স্কুল ছাত্র মেবতাউল ইসলাম মুক্ত, দেবহাটার হাফিজুর রহমান পিনু এবং সাতক্ষীরার ডা. সেলিনা রহমান। গুরুতর আহত হয়ে এখনও পঙ্গুত্বের অভিশাপে ভুগছেন অনেক মানুষ। জোট সরকার আমলে জঙ্গিদের এই হামলার কোনো বিচার হয়নি আজ অবধি। এমনকি কারা এর সাথে সরাসরি জড়িত তাও খুঁজে দেখা হয়নি। ২০০২ সালের সেই দিনে সেই নিহতরা আজ ১৯ বছর পর আবারও স্মরিত হবেন তাদের স্বজনদের কাছে ।
সাতক্ষীরা জজ আদালতের পিপি এড. আবদুল লতিফ জানান, বহুল আলোচিত এই তান্ডবের পর পুলিশ আওয়ামী লীগ দলীয় লোকজনকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকায় জেআইসিতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে কিছুই না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়। কয়েক দফায় হাত বদলের পর সিআইডি এ সংক্রান্ত দুটি মামলায় ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ফাইনাল রিপোর্ট দেয়। এতে বলা হয় ক্ষমতাসীন দল বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের হিসাবে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে এই বিরোধে কারা জড়িত ছিল তা আর চিহ্ণিত করার চেষ্টাও করেনি পুলিশ। এভাবেই মামলা দুটি শেষ হয়ে যায়। রাজধানী ঢাকার বাইরে কোনো জনাকীর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমাবাজির ঘটনা ছিল এটাই ছিল প্রথম ।
এদিকে পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে লেখালেখিতে বারবার সাংবাদিকরা উল্লেখ করেন যে, জঙ্গিরাই এই বোমাবাজির জন্য দায়ী। এরপর ২০০৫ সালে জেএমবি জঙ্গিদের সিরিজ বোমার পর প্রশাসন নিশ্চিত হয় যে ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বও সাতক্ষীরার স্টেডিয়ামে ও রক্সি সিনেমা হলে বোমাবাজির জন্য দায়ী ছিল জঙ্গিরাই।
ঢাকায় গ্রেপ্তার হুজি জঙ্গি বোমারু মিজান তার স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছিল তাদের নেতৃত্বে সাতক্ষীরায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল। হুজি জঙ্গি মুফতি হান্নানও সাতক্ষীরায় বোমা হামলার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। দীর্ঘদিন পর বোমা হামলার এই দুই মামলা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বোমারু মিজানকে সাতক্ষীরায় এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। সিআইডি মামলা দুটি পুনঃতদন্ত করছে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এএ