আর মাত্র একদিন বাকি। দ্বিতীয় দফায় আগমী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। তাই শেষ মুহুর্ত্বের প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারি প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারি সিংহভাগ প্রার্থীই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী একাধিক প্রার্থী। যে কারণে নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউনিয়ন গুলো হচ্ছে, ১নং জয়নগর, ২নং জালালাবাদ, ৩নং কয়লা, ৪নং লাঙ্গলঝাড়া, ৫নং কেঁড়াগাছি, ৬নং সোনাবাড়িয়া, ৭নং চন্দনপুর, ৯নং হেলাতলা, ১১নং দেয়াড়া ও ১২নং যুগিখালি ইউনিয়ন। এই ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন মোট ৩৮জন। এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডের মেম্বর পদে ৩৮৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর পদে ১২৪জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৯১টি। মোট ভোটার ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১ হাজার ৭৭৪ ও মহিলা ভোটার ৭২ হাজার ৬৯৬ জন। এখানে পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার কিছুটা বেশি।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারি সিংহভাগ প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজন। বিএনপি ও শক্তিশালী অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় অধিকাংশ ইউনিয়নে আ’লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি আ’লীগের বিদ্রোহী। ফলে অধিকাংশ ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের চাপে বেকায়দায় আছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, প্রার্থীসহ প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মারপিট, হুমকি, প্রচার মাইক ভাংচুর ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। নির্বাচনী পরিবেশ কেমন হবে, আদৌ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে প্রার্থীদের পাশাপাশি শংকা রয়েছে সাধারণ জনমনে। জনগণের ভাষ্যমতে কোন প্রার্থী জিততে পারবে তার সবকিছুই নির্ভর করছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপর। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
সোমবার অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কোন প্রার্থী এগিয়ে বা কে জিততে পারেন সেটার হিসাব-নিকাশ বেশ জটিল। অর্থের ছড়াছড়ি, কর্মী-সমর্থকদের বাড়াবাড়ি, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের ইমেজ, রাজনৈতিক সমর্থন, রাজনৈতিক গ্রুপিং, স্থানীয় অবস্থান ইত্যাদির আলোকে জয়-পরাজয় অনেকটা নির্ভর করবে। তবে ভোট গ্রহণ নিরপেক্ষ হলে অনেক ইউনিয়নে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত নানা জরিপের তথ্যমতে কলারোয়া উপজেলার ১নং জয়নগর ইউনয়নের ৫ জন প্রার্থীর সকলেই আ’লীগ ঘরণার। এখানে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়দেব কুমার সাহার (আনারস প্রতীক) সাথে মূল লড়াই হতে পারে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিদ্দিকুর রহমান (চশমা প্রতীক) ও আ’লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবুর (নৌকা প্রতীক) সাথে। পাশাপাশিই আছেন সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত তপন সাহার স্ত্রী আ.লীগ নেত্রী বিশাখা সাহাও (অটো রিকসা)। রয়েছেন আরেক আ.লীগ নেতা আব্দুল আজিজ বিশ্বাস (মোটর সাইকেল)।
২নং জালালাবাদ ইউনিয়নে একই গ্রামের ৩ প্রার্থীর মধ্যে আ’লীগের সভাপতির ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাফুজুর রহমান মিশানের (আনারস প্রতীক) সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পরে নৌকার প্রার্থী অধ্যাপক আমজাদ হোসেনের। পরপরই থাকতে পরেন দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদও (চশমা)।
৩নং কয়লা ইউনিয়নে ৩ প্রার্থীর মধ্যে আ’লীগ ঘরণার স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ সোহেল রানার (মোটর সাইকেল) সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বিএনপি ঘরণার স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ রফিকের (আনারস)। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে যে কেউ জিততে পারেন খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে। বেশ পিছিয়েই থাকতে পারেন আ.লীগের প্রার্থী আসাদুল ইসলাম (নৌকা)।
এদিকে ৪নং লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নে প্রার্থী দু’জনই আ’লীগ ঘরণার। সেখানেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জনমতে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন। আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাস্টার নুরুল ইসলামের (আনারস) মূল ভরসা জামায়াতের ভোট।
৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে ৩জন আ’লীগ ঘরণার প্রার্থীদের মাঝে ত্রি-মুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। ইউনিয়ন আ’লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মারুফ হোসেন (মোটরসাইকেল) ও আরেক বহিষ্কৃত নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিলের (আনারস) সাথে মূল লড়াই হতে পারে। সঙ্গে যুক্ত থাকবেন নৌকার প্রার্থী ভুট্টোলাল গাইনও।
৬নং সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে ৪জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দ্বি-মুখি। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা এসএম শহিদুল ইসলামের (মোটর সাইকেল) সাথে নৌকার প্রার্থী বেনজির হোসেনের। অপর দুই প্রার্থী আকবর আলী (আনারস) ও আলমগীর আজাদ (চশমা) থাকবেন বেশ পিছিয়ে।
৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নে আ’লীগ ঘরণার ৩ প্রার্থীর মধ্যে দ্বি-মুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আ’লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ডালিম হোসেনের (আনারস) সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ মিঠুর (মোটরসাইকেল)। কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেন নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনিও।
অপরদিকে ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নে ৫জন প্রার্থীর মধ্যে হতে পরে দ্বি-মুখি। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পারেন একসময়ের বিএনপি ও বর্তমানে আ’লীগ ঘনিষ্ঠ স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন (মোটর সাইকেল) ও জামায়াত ঘরণার প্রার্থী আবু তালেব সরদারের (চশমা)। নৌকার আনছার আলী সরদার, আ.লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজেদ বিশ্বাস (আনারস) রয়েছেন বেশ পিছিয়ে। আর আরেক প্রার্থী ইকবাল হোসেন (ঘোড়া) রয়েছেন মাত্র কাগজে-কলমে।
১১নং দেয়ড়া ইউনিয়নে ৬জন প্রার্থীর মধ্যে ত্রি-মুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা ইব্রাহিম হোসেন (মোটর সাইকেল), আ’লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান (চশমা) ও নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মফে। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বককার সিদ্দিক (টেলিফোন), নাজমা পারভীন (টেবিল ফ্যান) ও মিনাজ উদ্দীন (আনারস) থাকবে বেশ পিছিয়ে।
১২নং যুগিখালী ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বি ৪ প্রার্থীই আ’লীগ ঘরণার। ব্যালটে নাম-প্রতীক থাকলেও ইতিমধ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আবুল বাশার (ঘোড়া)। বাকী ৩ প্রার্থীর মধ্যে লড়াই দ্বি-মুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আ’লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদ আলীর সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রবিউল হাসানের। পরপরই থাকতে পারেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ওজিয়ার রহমানও (চশমা)।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রোববার থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। নির্বাচনে দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তারা যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। একই সাথে ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে ‘নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন’ এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ‘সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট দিতে চান। নির্বাচন মূলত সকল ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠির তথা সার্বজনীন আনন্দ উৎসব। সেই উৎসব যেনো অটুট থাকে। হার-জিত যেটাই হোক, একটি সুন্দও নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকাটা জরুরি।’
খুলনা গেজেট/টিআই/এনএম