আফগানিস্তানে গণি সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ নিজেকে দেশের বৈধ ও সাংবিধানিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
রাজধানী কাবুলসহ দেশের বেশিরভাগ প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে গেলেও আফগানিস্তানের বিক্ষুব্ধ ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ বলেছেন, তিনি কখনোই তালেবানের কাছে মাথানত করবেন না। মঙ্গলবার দেশটির সরকারি বাহিনীর সর্বশেষ নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা কাবুলের উত্তরপূর্বের পাঞ্জশির উপত্যকা থেকে তালেবানকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন তিনি।
আত্মগোপনে যাওয়ার আগে রোববার এক টুইট বার্তায় আমরুল্লাহ সালেহ বলেন, আমাকে যে লাখ লাখ মানুষ শুনছেন আমি তাদের হতাশ করবো না। আমি কখনোই তালেবানদের সাথে এক ছাদের নিচে থাকবো না। কখনোই না।
তালেবানরা রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরুল্লাহ সালেহর সাবেক পরামর্শদাতা এবং প্রখ্যাত তালেবানবিরোধী যোদ্ধা আহমদ শাহ মাসুদের ছেলের সাথে তার ছবি আসতে শুরু করে। এ সময় তাকে হিন্দু কুশের একটি পাহাড়ি এলাকায় দেখা যায়।
কিন্তু রোববার তালেবান রাজধানী কাবুলে প্রবেশের পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে আফগানিস্তানের এই ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে খবর আসে।
ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, স্থানীয় একটি মিলিশিয়া বাহিনীর কমান্ডার মাসুদের ছেলেকে নিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেহ তালেবানকে মোকাবিলায় পাঞ্জশিরে গেরিলা আন্দোলনের জন্য মিলিশিয়াদের সংগঠিত করছেন বলে ছবিতে দেখা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার দুর্গ হিসেবে পরিচিত পাঞ্জশির উপত্যকা গৃহযুদ্ধের সময় ১৯৯০ এর দশকেও তালেবানের হাতে পতন হয়নি। এমনকি সোভিয়েত আমলেও এই উপত্যকা জয় করতে পারেনি কেউই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপত্যকার এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা তালেবানকে পাঞ্জশিরে প্রবেশ করতে দেবো না। আমরা সর্বশক্তি এবং ক্ষমতা দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়বো।’
এক সময়ের গোয়েন্দা প্রধান থেকে পরবর্তীতে আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া আমরুল্লাহ সালেহ তালেবানের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি ব্যবহার করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। কিশোর বয়সে বাবা-মা হারানো সালেহ ১৯৯০ এর দশকে গেরিলা কমান্ডার মাসুদের সাথে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে তালেবান রাজধানী কাবুলের দখল নেওয়ার আগে পর্যন্ত সরকারে কাজ করেছিলেন আমরুল্লাহ। পরে দেশটির কট্টরপন্থী তালেবানরা সালেহকে আটকের উদ্দেশ্যে তার বোনকে নির্যাতন করে। গত বছর প্রভাবশালী সাময়িকী টাইমে লেখা এক নিবন্ধে সালেহ বলেছিলেন, ১৯৯৬ সালের সেই ঘটনার কারণে তালেবানের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি আজীবনের জন্য পাল্টে গেছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যখন নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা হয়, তখন সালেহ তালেবানবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক জোটের হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান সম্পদ বনে যান তিনি।
সিআইএর নজরে আসায় তার জীবনের গতিপথ পাল্টে যায়, ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের নবগঠিত গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিরেক্টরেটের (এনডিএস) প্রধান নিযুক্ত হন তিনি। এনডিএসের প্রধান থাকাকালীন সালেহ তালেবান বিদ্রোহীদের ভেতরে এবং পাকিস্তান সীমান্তজুড়ে তথ্যদাতা এবং গুপ্তচরদের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। তালেবানের নেতাদের গতিবিধির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সালেহকে পাচার করেন পশতু ভাষার এজেন্টরা।
সালেহ নেতৃত্বাধীন আফগান গোয়েন্দারা সেই সময় তালেবানের প্রতি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সহায়তার প্রমাণ পান। ২০১০ সালে কাবুলের শান্তি সম্মেলনে হামলা হওয়ায় আফগানিস্তানের গোয়েন্দা প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সালেহকে।