সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়দ্দহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া খালের দু’পাশ কেটে পাট ভেজানোর কারণে পঁচা পানির দুর্গন্ধে সেখানে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানি ও খালের দু’পাশ উপচে পড়া জোয়ারের পানিতে কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ চলাচলের আইলগুলি। স্বচ্ছ ও সুপেয় পানির অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে সেখানে। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন সেখানে বসবাসকারি ভূমিহীন পরিবারগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার হাড়দ্দহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৯৪ শতক সরকারি জায়গায় বানানো ঘরে বসবাস করছে ৪৭টি পরিবার। রাধানগর খালের ৪০০ ফুট লম্বা জায়গা জুড়ে পাট ভেজানো হয়েছে। কাঁচা পাট পানিতে ডুবিয়ে রাখতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের পাশ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। পাট পঁচা পানির দুর্গন্ধে সেখানে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে অস্থায়ীভাবে দু’টি টিউবওয়েল বসানো হলেও সেই পানি ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। খালের পানিতে গোসল করা ও থালা বাসন ধোয়া গেলেও পাট পঁচানোর পর থেকে ওই পানি দুর্গন্ধ ও জীবানু ভরা।
এছাড়া কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ফলে আশ্রয়ন প্রকল্পের ১১ নং বাড়ির মালিক সামছুন্নাহারের বসতঘর ও রান্নাঘরের মেঝে বসে গেছে। ইউসুফের ঘরের বারান্দা ও মেঝে বসে গেছে। মিলনের ৩৪নং বাড়ির মেঝে বসে গেছে। মহিদা খাতুনের ২২ নং বাড়ির শৌচাগারের প্যান বসে গেছে।
সামছুন্নাহার জানান, প্রায় দু’মাস হলো তারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করছেন। মাসখানিক কোন রকমে ভালো ছিলেন। কিছুদিন পর তার বসতঘর ও রান্নাঘরের মেঝে বসে গেছে। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে খালের পানিতে পাট ভেজানো শুরু করেন স্থানীয়রা। ওই সময় টিউবওয়লের অভাবে খাওয়ার পানি দূর থেকে আনতে হতো। শৌচাগারে, গোসলে ও বাসন ধুতে খালের পানি ব্যবহার করা যেতো। এখন সব কিছুর জন্য দূরবর্তী পুকুর ও টিউবওয়েলের উপর নির্ভর করতে হয়। খালের ধারের মাটি কাটতে কাটতে তাদের ঘরের পাশ পর্যন্ত চলে এসেছে। পানিতর ও রাধানগর বিলের পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় দু’তীর প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ঘরের পাশ দিয়ে যাতায়াতের আইলগুলো মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
মিলন হোসেন জানান, তার ঘরের মেছে বসে গেছে। ঘরের সামনে সকল সময় পানি রয়েছে। খাল পার হয়ে রাস্তায় ওঠার জন্য কোন সাকো নেই। বেড়েছে মশার উপদ্রব। পরিবার পরিজন বসবাস করা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
মহিদা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাল উদ্যোগ নিলেও জায়গা নির্বাচন ও ঘর তৈরির সঙ্গে যুক্ত কিছু অসাধু লোকজনের জন্য তাদের এ দুরাবস্থা। নিচু জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্প করায় এখানে বসবাসকারি পরিবারগুলো নানা সমস্যায় ভুগছে। পচা পাটের গন্ধে ঘরে টেকা যায় না। ভাত খাওয়ার সময় বাতাস হলে বাচ্চারা গন্ধে খাবার খেতে পারে না। একই সাথে রয়েছে পরিষ্কার পানির অভাব। তিনি এই পরিস্থিতি থেকে নিষ্কৃতির দাবি জানান।
জাহিদ হোসেন বলেন, কারো ঘরের দেয়ালে ও মেঝেতে ফাটল দেখা দিলে তাকেই মেরামত করতে বলা হয়। তিনি করেও যান ওই কাজ। হাড়দ্দহ বাদামতলার সামছুল হক, চৌবাড়িয়ার আব্দুর রহিম, আদর্শ গুচ্ছগ্রামের আফছার আলী, হাড়দ্দহের মঙ্গল সরকার, আসাদুজ্জামানসহ কয়েকজন খালে পাট ভিজিয়েছেন। কিছু কিছু সময় উঠানে হাঁটু পানি। নেই রাস্তা ঘাট। ফলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতিরা পড়েছেন মানবিক বিপর্যয়ে মধ্যে। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।
তবে স্থানীয় জমির মালিক আফছার আলী ও আসাদুজ্জামান জানান, প্রতি বছর তারা পাট চাষ করে ওই খালের পানিতে ডুবিয়ে থাকেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প হওয়ার আগেই তারা পাট চাষ করেছেন। ওই খালে পাট ভেজানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। দূরের কুমড়োর খালে পাট ভেজালে চুরি থেকানো যাবে না। তাই আগামি বছর থেকে বিকল্প ব্যবস্থা না করতে পারলে তারা পাট চাষ করবেন না বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ভোমরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার কান্তিলাল সরকার জানান, বেশ কিছুদিন আগে তিনি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় সেখানে গিয়েছিলেন। খালে পাট ভেজানোর কথা তিনি শুনেছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখার জন্য আগামি সোমবার হাড়দ্দহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাবেন তারা।
খুলনা গেজেট/এনএম