সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও সে অনুযায়ী নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না পৌরবাসী। খানাখন্দে ভরা পৌর এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট। সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে যায় শহরের ওলি গলির পাকা সড়ক, বসতবাড়ির আঙ্গিনা এমনকি মানুষের থাকার ঘরটিও। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় মাত্র দু’দিনের বৃষ্টিতে পৌর শহরের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর একদিকে করোনা আর অপর দিকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার দূষিত পানি থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ভয়ে আতংকিত পৌরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত (২০২১-২২ অর্থবছর) সাতক্ষীরা পৌরসভায় ২২০ কোটি টাকারও বেশি বাজেট বরাদ্দ হলেও দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন দেখেনি পৌরবাসী। নামে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও সেবাদানে তৃতীয় শ্রেণীর মত। তবে নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার কারণে পৌর সভার পানিতে সদর উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে স্যানিটেশন সমস্যা ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দিন পার করছে। একই সাথে ভুগছে ডেঙ্গু আতংকে।
সরেজমিনে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার ইটাগাছা, কামালনগর, বদ্দিপুর, পুরাতন সাতক্ষীরা, ঘুড্ডির ডাঙ্গি, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, কাটিয়া, ঝুটিতলা, লস্করপাড়া, ইটাগাছা, বাগানবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, এসকল এলাকায় পৌরসভার পানি নিস্কাশনের সু-ব্যবস্থা নেই। তবে সরকারি খাল ও পানি নিষ্কাশনের পথ দখল করে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করার কারণে সামান্য বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
একদিকে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল, নদী ভরাট, অপরদিকে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণে আটকে গেছে সাতক্ষীরা পৌরসভার পানি নিস্কাশনের পথ। এতে করে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পৌরসভার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধ থাকে। এর ফলে জলাবদ্ধতার শিকার হাজারো পরিবারের নারী, শিশু ও বয়স্করা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতা থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ পানি নিস্কাশনে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা রাখতে না পারায় জলাবদ্ধ এলাকার স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে, যা পৌরবাসীর জন্য রীতিমত আতংকের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। তারপরও জীবনের প্রয়োজনে কেউ সাঁতরাচ্ছেন এই নোংরা পানি, কেউবা ভেলায় চড়ে যাতায়াত করছেন নিজেদের গন্তব্যে।
অপরদিকে পৌরসভার এসমস্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর বন্যার কবলে পড়েন পৌরবাসী। তবে পানির চাপ বেশি হলে এসমস্ত পানি পৌর এলাকার অপরিকল্পিত ঘেরের উপর দিয়ে সদর উপজেলার লাবসা, ব্রহ্মরাজপুর, ফিংড়ি ও ধুলিহর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের লোকালয়ে প্রবেশ করতে থাকে। লোকালয় ছাড়া বেতনার তলদেশ উঁচু হওয়ায় এসমস্ত পানি বেতনা নদীর বেড়িবাঁধে আটকে যায়। ফলে পৌরসভার পানি গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে লাবসা, ব্রহ্মরাজপুর, ফিংড়ি ও ধুলিহর ইউনিয়নবাসীর জন্য।
ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহামন বাবু জানান, পৌরসভার চেয়ে আমাদের ইউনিয়নসমূহ নিম্নবর্তী এলাকায় অবস্থিত। তার উপর লোকালয়ের চেয়ে বেতনা নদীর তলদেশ উঁচু। প্রতিবছর পৌর এলাকার পানির চাপ নিম্নবর্তী এলাকাসমূহ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেতনার উঁচু তলদেশে গিয়ে আটকে যায়। এতে করে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে সদও উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক কৃষক। সঠিকভাবে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট এ বন্যার কবলে পড়ে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এ ইউনিয়নের মানুষ। এসময় বেতনা নদী খনন ও পৌরসভার পানি নিস্কাশনের জন্য পৌর এলাকার অপরিকল্পিত ঘের উচ্ছেদের জোর দাবী জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, মাত্র গুটিকয়েক ঘের মালিকের কারণে পৌরসভা ও আশপাশের মানুষ শিকার হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতার। এবিষয়ে জেলা প্রশাসন ও পৌর মেয়র বরাবর একাধিকবার অভিযোগ করলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। তিনি পানি নিষ্কাশনে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিত বাঁধের কারণেই পৌরসভার পানি নিস্কাশনের পথ আটকে দেয়া হয়েছে। সেখানে মানা হয়নি মৎস্য ঘের নীতিমালাও। এবিষয়ে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভায় একাধিক বার অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপরিকল্পিত ঘের নির্মান, সরকারি রাস্তাকে ঘেরের বাধঁ হিসেবে ব্যবহারের কারণে বছরের প্রায় ৬মাস জলাবদ্ধতায় আটকে থাকে পৌরসভার নিম্নাঞ্চল। দীর্ঘদিনের সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে যাতায়াতের রাস্তা, ঘরবাড়িসহ স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে পচাঁ দুর্গন্ধময় দূষিত পানিতে ছড়াচ্ছে চর্মরোগ। পরিবেশ দূষণের কারণে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে পৌরবাসীর মাঝে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
খুলনা গেজেট/ এস আই