বেইলি রোডে আগুনের দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ এবং একইসঙ্গে এই ঘটনাকে দুর্নীতির একটি ফলাফল হিসেবে মন্তব্য করেছেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় আয় বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, যা আমাদের অর্জন। কিন্তু দুর্নীতির কারণে আমাদের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশিত সুফল আমরা ভোগ করতে পারছি না। দুর্নীতি যদি মাঝামাঝি পর্যায়েও রোধ করা যেতো, তাহলেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও ৩ শতাংশ বেশী হতে পারতো।
শনিবার (০২ মার্চ) সকালে খুলনার সিএসএস আভা সেন্টারে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) আঞ্চলিক সম্মেলনে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবির জাতীয় খানা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় মনে করে ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। সেবা প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের কাঁধে বিত্তশালীদের ঋণের বোঝা। অথচ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, বর্তমানে দুর্নীতির একটি চিত্র অর্থ পাচারের ক্ষেত্রেও সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বে যেসব দেশ অর্থ পাচারে শীর্ষে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। যদি অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ করা যেতো, তাহলে বছরে দেশের ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ রক্ষা করা যেতো, যা জাতীয় আয়ের ৪ শতাংশের মতো। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। ফলে অর্থ পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয় না।
খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের ১৪টি সনাকের প্রায় দুইশ’ সদস্যের উপস্থিতিতে দুই দিনব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী এই আঞ্চলিক সনাক সম্মেলন শনিবার শেষ হয়।
ড. ইফতেখারুজ্জামান জাতির জনকের ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চের বক্তব্যের সূত্র ধরে বলেন, জাতির পিতা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি করে সামাজিক আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে অনুপ্রেরণা থেকেই টিআইবি তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করে প্রত্যেক দুর্নীতিবাজকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলেই বাংলাদেশের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সম্মেলনে বক্তব্য দেন সনাক খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা, টিআইবির সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ফারহানা ফেরদৌস, সনাক ঝিনাইদহের সভাপতি এম সাইফুল মাবুদ, সনাক ফরিদপুরের সহ-সভাপতি পান্না বালা, সনাক বরিশালের সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন, সনাক কুষ্টিয়ার সভাপতি আসমা আনসারী মীরু, সনাক খুলনার সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির, সনাক মাদারীপুরের সদস্য অধ্যাপক মকবুল হোসেন, সনাক যশোরের সদস্য মাহমুদ হাসান বুলু, সনাক রাজবাড়ীর সভাপতি অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান, সনাক বাগেরহাটের সভাপতি রাম কৃষ্ণ বসু, সনাক পটুয়াখালীর সদস্য মো. নূরেজ্জামান খান, সনাক ঝালকাঠির সদস্য শিমুল সুলতানা হেপী, সনাক বরগুনার সদস্য মো. আনিসুর রহমান, সনাক পিরোজপুরের সভাপতি এম এ রব্বানী ফিরোজ ও সনাক সাতক্ষীরার সভাপতি হেনরী সরদার প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/কেডি