খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চাওয়াই নদীতে গোসলে নেমে প্রাণ গেল দুই শিশুর
  গরুবাহী নছিমনের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত
  জামালপুরে ধান মাড়াই করতে গিয়ে তাঁতী লীগ নেতার মৃত্যু
  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

থ্যালাসেমিয়া সচেতনতায় পায়ে হেটে নড়াইলে ভারতীয় যুবক

লোহাগড়া প্রতিনিধি

‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান।’ প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া নামে বিরল এ রোগে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এ রোগে আক্রান্তের হিসেবে বিশ্বের মোট আক্রান্তের আনুপাতিক হারে এগিয়ে ভারত-বাংলাদেশ। আর এই রোগে আক্রান্তদের বাঁচাতে পারে এক ব্যাগ রক্ত। রক্ত দান করতে প্রয়োজন হয় আত্ম-সচেতনতা। সেই সচেতনতা তৈরি করতেই হাতে পোস্টার, পায়ে শক্ত বুট, পিচঢালা পথ পেরিয়ে কলকাতা (ভারত) থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকা যাচ্ছেন আলমগীর খান। পেশায় তিনি একজন প্রকৌশলী।

যশোর-নড়াইল রোড ধরে পায়ে হেঁটে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) যশোর থেকে রওনা হয়ে বিকেলে নড়াইলে পৌছান আলমগীর খান।
তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা। ভারতের কলকতার অদূরে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে তার যাত্রা শুরু হয় বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি), গন্তব্য বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

আলমগীর খান নামে ওই যুবক ৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এসে পৌঁছান বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁতে। বারাসাত থেকে তাঁর রুট ছিল কলকাতা শহর ঘেঁষা যশোর রোড। পথে যেতে যেতে কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। রক্ত দিলে নিজের কোনো ক্ষতি হয় না বরং বাঁচে আরেকজনের জীবন-এমন কথা বোঝান রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকার উৎসুক মানুষকে।
সাধারণ মানুষজনও আলমগীরের কথা শোনেন। কেউ কেউ এগিয়ে করেন করমর্দন, তোলেন সেলফিও।

আলমগীর বলেন, ভারতের কলকাতায় আমাদের ভাষা হচ্ছে বাংলা আর বাংলাদেশের ভাষাও একই। আমার আন্দোলন থ্যালাসেমিয়া ও রক্তদান নিয়ে। থ্যালেসেমিয়া মুক্ত বিশ্ব গড়তে হবে আমাদের। না হলে আগামীতে প্রত্যেক ১০ জনের মধ্যে একজন বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে’।

তিনি আরও বলেন, সকলে একজোট হয়ে যদি থ্যালাসেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়, তাহলে শুধুমাত্র ভারত কিংবা বাংলাদেশ কেন, গোটা বিশ্ব থেকে থ্যালাসেমিয়াকে একটা সময় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব।

আজ আমার পথযাত্রার ৬ষ্ঠ দিনে আমি নড়াইল জেলাতে প্রবেশ করেছি। আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে আমার এ পথ যাত্রা শেষ হবে। বাংলাদেশ সরকারসহ সকলকে তিনি থ্যালেসেমিয়া নিয়ে ভাবার আহ্বান জানান।

আলমগীর আরও বলেন, ২০১৬ সালে রক্তের অভাবে এক বড় ভাইকে রক্তের অভাবে মারা যেতে দেখেই মূলত তিনি রক্তদান ও থ্যালেসেমিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেন। যাদের ওজন ৫০ কেজি এবং বয়স ১৮ বছর তাদেরকে রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে পায়ে হেঁটে দূরত্ব অতিক্রম করা আলমগীরের কাছে নতুন বিষয় নয়। পায়ে হেঁটে এর আগে একবার কলকাতা থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। তাই হাঁটার অভিজ্ঞতা তার কাছে নতুন কোন বিষয় নয়। যদিও বাংলাদেশে হেঁটে আসার অভিজ্ঞতা তার নতুন। তাই রয়েছে বাড়তি কৌতুহলও।

গত বছরও আলমগীর মালদা থেকে দিল্লি একইভাবে পায়ে হেটে প্রচারণা করেন। একই স্লোগানে মে মাসে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন মালদা থেকে সিটি অফ জয় কলকাতায়। এবার তার গন্তব্য কলকাতা থেকে ঢাকা; উদ্দেশ্যও এক ‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান’।

এদিকে সোমবার বিকেলে নড়াইলে পৌছালে নড়াইলের মুচিরপোল এলাকায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। এসময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এর মধ্যে মানবিক নড়াইল, রক্তের ফেরিওয়ালা নড়াইল এবং একটু হাসি সেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশনের সদস্যরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক নড়াইল এর ইমামুল ইসলাম রিয়ান বলেন, কলকাতা থেকে পায়ে হেটে আলমগীর ভাই যে প্রচার করছে এটা বিরল ঘটনা। মানবিক কাজ সবাই করতে পারে না ইচ্ছা থাকলেও। তার এ উদ্যোগ আসলেই প্রশংসনীয়।

লোহাগড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নেতা ইকরামুল ইসলাম বলেন আলমগীর ভাইয়ের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।

আলমগীর খান মঙ্গলবার সকালে পায়ে হেঁটে নড়াইল শহর থেকে লোহাগড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। নড়াইল-লোহাগাড়া মহাসড়ক হয়ে আলমগীর পায়ে হেঁটে মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ লোহাগড়া উপজেলা সদরে পৌঁছান। লোহাগড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তিনি মধুমতি ব্রিজ পার হয়ে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে লোহাগড়া ত্যাগ করেন।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!