মাঠের পর মাঠ এখন পাকা ধানের সোনালী ধানের দোলা, বাতাসের সাথে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। এমন সময় দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে হয়েছে বৃষ্টিপাত। সব মিলিয়ে যখন চরম চিন্তায় কৃষক তখন এলাকার ১২জন অসহায়, দরিদ্র কৃষকের পাশে দাড়িয়েছে নড়াইলের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কৃষকের সংকট সমাধানে মাঠে নেমে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ এক অন্যরকম দৃশ্য, কারো মাথায় টোপা, কারো গামছা বাঁধা, কারো আবার কাস্তে হাতে। উপলক্ষ্য বিদ্যালয় মাঠ পেরিয়ে পাশের মেঠো জমিতে সোনালি ধানকর্তন। এরা কেউ পেশাগত কৃষক নয় সকলেই শিক্ষার্থী। শুধু ধানকাটাই নয়, বাড়িতেও পৌঁছে দিয়েছেন সোনালি ফসল। শুক্র থেকে রবিবার তিনদিনে এলাকার ১২ জন কৃষকের প্রায় ৬ একর জমির ধান ক্ষেত থেকে বাড়িতে পৌঁছে নিয়েছেন তারা। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে দারুণ খুশি এলাকার কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
গুয়াখোলা গ্রামের প্রতাপ কুমার পাল জানান, বর্তমানে ধানকাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তিনবেলা খাবারসহ জনপ্রতি শ্রমিকের মূল্য গুণতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। তাও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। গুয়াখোলা স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে আমার ৬০ শতক জমি ধান প্রায় ১০ মিনিটে কেটে দিয়েছেন। এই দুর্যোগের সময় তাদের পাশে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি।
অপূর্ব সরকার, হাসিদা রানী, মহাদেব সরকারসহ এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, স্কুলের ছেলে-মেয়েরা যে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের ধান কেটে দিচ্ছে, তাতে আমরা মহাখুশি। অনেক উপকার হচ্ছে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌমিত্র গোস্বামী বলে, শ্রমিক সংকটকালে আমাদের গুয়াখোলা বিদ্যালয়ের ৩১৫জন ছাত্রছাত্রী মাঠে নেমে ধান কেটে দিচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা দেশের অন্যান্য এলাকাতেও সবাই কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে ধান কেটে দিবেন।
সোমা ও স্বর্ণালি বিশ্বাসসহ বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে আমরা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
শিক্ষক তাপস পাঠক ও স্বপন কুমার সেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ জমিতে পানি জমে গেছে। এ সংকটময় মুহূর্তে আমরা এলাকার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, বোরো ধানের ভরা মওসুমে বর্তমানে শ্রমিক সংকট চলছে। পাশাপাশি ‘অশনি’ ঝড়ের প্রভাবে গত তিন থেকে চারদিন ধরে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এলাকার গরিব কৃষকদের ধান কেটে দিবো। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ তিনদিন ধানকাটার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই তিন দিনে ১২ জন কৃষকের প্রায় ৬ একর জমির ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, নড়াইল জেলায় এ বছর ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ধানের দাম সন্তোষজনক হওয়ায় খুশি কৃষকেরা।
খুলনা গেজেট/ এস আই