খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২ মে, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আর নেই
  ৪৯ টাকা কমে ১২ কেজি এলপিজির নতুন দাম ১ হাজার ৩৯৩ টাকা
  অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জামিন পেলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
গাইনী বিশেষজ্ঞের অভাবে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের দুর্ভোগ

চিকিৎসক সংকটে দিঘলিয়ার দেড় লক্ষাধিক মানুষ সু-চিকিৎসা বঞ্চিত

একরামুল হোসেন লিপু

ভৈরব, আতাই, আঠারোবাকী এবং মজুতখালী নদী বেষ্টিত খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ৪ টি ইউনিয়ন। ইউনিয়ন ৪ টিতে দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও জেলা শহরের সঙ্গে ইউনিয়ন ৪ টি’র সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।  ৪ টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা প্রদানের একমাত্র ভরসার স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের কারণে এ এলাকার মানুষ সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বছরের পর বছর স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট লেগেই থাকে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন মাত্র ১ জন চিকিৎসক। বাকী ১০ জনের মধ্যে ১ জন সপ্তাহে দুইদিন এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী দেখেন। ৫ দিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পোস্টিং স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে থাকলেও তিনি প্রেষণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতালটিতে গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

খুলনা মহানগরীর আওতাভূক্ত আড়ংঘাটা ইউনিয়ন ও খানজাহান আলী থানার আওতাভূক্ত যোগীপোল ইউনিয়ন এবং জেলার আওতাভূক্ত ৪ টি ইউনিয়ন যথাক্রমে দিঘলিয়া সদর, সেনহাটী, বারাকপুর এবং গাজীরহাট ইউনিয়ন নিয়ে দিঘলিয়া উপজেলা গঠিত। ৬ টি ইউনিয়ন নিয়েই উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। দ্বীপ বেষ্টিত এ উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে বেসরকারিভাবে কোন হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক গড়ে উঠেনি। ৪ টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাস ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ১৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিক।

উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ১৯৯২ সালে ৬ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে ৩১ শয্যা নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালে ১৯ শয্যা বৃদ্ধি করে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ৫০ শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও জনবল সংকট, চিকিৎসক সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার আশঙ্কায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হতে রোগীদের অনীহা রয়েছে।

বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চরম সংকট বিরাজমান। ২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৮ জন মেডিকেল অফিসার, ওয়ার্ড বয় এবং নার্স দিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামগ্রিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতালের দোতলায় ১টি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও এ্যানেসথেশিষ্ট বা অচেতনবিদের অভাবে কোন মেজর অপারেশন করা হয় না। একজন এ্যানেসথেশিস্ট পোস্টিং থাকলেও তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে(সংযুক্তিতে) কাজ করছেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে কোন গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে এলাকার গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে নেই কোন ডেন্টাল সার্জন, অর্থোপেডিকস চিকিৎসক, রেডিওগ্রাফার। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। রোগী পরিবহনের জন্য ১টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ড্রাইভারের কোন পোস্টিং নেই। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগকৃত এক জনকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো হচ্ছে। হাসপাতালটিতে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও এটি পরিচালনার জন্য নেই কোনো প্রশিক্ষিত চিকিৎসক।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে গুরুতর রোগীদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় জরুরী বিভাগে আগত গুরুতর রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা (নদী পারাপার)’র কারণে গুরুতর রোগী এবং তাদের স্বজনদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পুরনো ভবনটির অবস্থা জরাজীর্ণ। ছাদের প্লাস্টার খসে পড়তে শুরু করেছে। ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এটি মেরামত কিংবা নতুন ভবন তৈরি করা খুবই জরুরী।

স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও দ্বীপ বেষ্টিত এ উপজেলার কোথাও ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক গড়ে উঠেনি। সংগত কারণেই এ উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে বছরের পর বছর এ এলাকার মানুষ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সু-চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪’শ থেকে ৫’শ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভীড় জমায়। বহিঃর্বিভাগে আগত একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামগ্রিক সেবা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রাপ্তিতে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।

হাসপাতালটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও দিঘলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলামের কাছে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, সামগ্রিকভাবে হাসপাতালটি সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে আমরা চিকিৎসকের কিছু শূন্যপদ পূরণ করেছি। বাকী শূন্যপদগুলো পূরণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে উপজেলা পরিষদে আসা জাইকার ফান্ড থেকে আমরা হাসপাতালটিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ফ্লু ইউনিট তৈরিতে সহায়তা করেছি। হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আগত রোগীরা প্রকৃত সেবা পাচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে আমরা নিয়মিত নজরদারি করে থাকি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট এর বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাহবুবুল আলমের কাছে। তিনি খুলনা খুলনা গেজেটকে বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়নের জন্য আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়ত তাগিদ দিয়ে আসছি। পুরাতন ভবনটির সংস্কার অথবা নতুন ভবনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বহিঃর্বিভাগে এবং ভর্তিকৃত রোগীদের প্রাপ্যতা অনুসারে আমরা প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ওষুধ সরবরাহ করে থাকি। স্বল্প জনবল নিয়েও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। জনবল সংকটের বিষয়টিও যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবহিত আছেন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!