খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  তীব্র তাপদাহের মধ্যে আজ খুলছে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সিরিজ বোমা হামলা : সাতক্ষীরায় ৮ জঙ্গির ১৩ বছরের কারাদণ্ড

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী ৬৩ জেলার মধ্যে সাতক্ষীরার পাঁচটি স্থানে জেএমবি’র বোমা হামলার ঘটনায় ৫টি মামলার প্রত্যেকটিতে ৮ জনকে সর্বোচ্চ ১৩ বছর, ২ জনকে ৬ বছর এবং আপর ২ জনকে ৩ বছর করে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামীকে ১ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে, আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।

এসময় অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় ২ জন আসামীকে বে-কসুর খালাস দেয়া হয়। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ শরিফুল ইসলাম বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে ১১ আসামীর উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষনার সময় মামলার ৩ জন আসামী পলাতক ছিলেন।

সাজাপ্রাপ্ত অসামিরা হলেন, কলারোয়ার পুটনী গ্রামের আলী আকবরের ছেলে নাইম ওরফে আবদুন নাইম, সাতক্ষীরা সদরের পাথরঘাটা গ্রামের মৃতঃ আব্দুল জলিলের ছেলে ফকরউদ্দিন রাজী, শহরের ইটাগাছা মধ্যপাড়ার মনির উদ্দীন সরদারের ছেলে মোঃ মনোয়ার হোসেন ওরফে উজ্জল, শহরের ইটাগাছার মৃত: কেরামত আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান ওরফে মুন্না, সদরের কাসেমপুরের মৃতঃ ওমর আলীর ছেলে গিয়াসউদ্দিন সরদার, জামালপুর জেলার চরশী খলিফাপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে বেলাল হোসেন ওরফে আব্দুল্যাহ, একই এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে মোঃ ইসমাইল ওরফে মোঃ হাবিবুর রহমান, মোঃ মাহবুবুর রহমান ওরফে লিটন ওরফে পলাশ ওরফে সানা, আশাশুনির কুল্যা গ্রামের মৃতঃ আব্বাস আলীর ছেলে নূর আলী মেম্বার, সদরের খড়িবিলা গ্রামের মৃত: ফজর আলীর ছেলে মোঃ মোন্তাজ ওরফে মমতাজ ওরফে মোন্তাজ আলী, একই গ্রামের আব্দুল মাজেদ সরদারের ছেলে মোঃ আসাদুল, শহরের ইটাগাছা পশ্চিম পাড়ার ওমর আলী সরদারের ছেলে মোঃ আনিসুর রহমান খোকন।

এদের মধ্যে নাঈমউদ্দিন ওরফে নাঈম, ফকরুদ্দিন আল রাজী, মোঃ মনিরুজ্জামান মুন্না, গিয়াসউদ্দিন সরদার, বেল­াল হোসেন ওরফে আব্দুল্লাহ, হাবিবুর রহমান ওরফে ইসমাইল ও মাহাবুবর রহমানকে ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ও ৪ ধারায় ১৩ বছর করে, নূর আলী মেম্বর ও মনোয়র হোসেন উজ্জলকে ১০ বছর করে, মোঃ মন্তাজ ওরফে মমতাজ, আসাদুল হক, আনিছুর রহমান খোকন, প্রত্যেককে তিন বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামীকে ১ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে, আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। তবে আসামিদের হাজত বাসের মেয়াদ মূল সাজা থেকে বাদ যাবে।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন, নাইম ওরফে আবদুন নাইম, ফকরউদ্দিন রাজী ও মোঃ মনোয়ার হোসেন ওরফে উজ্জল। খালাস প্রাপ্ত আসামীদ্বয় হলেন, মোঃ সাইফ ওরফে আসাদুজ্জামান ওরফে হাজারী ওরফে সাইদ ও আবুল খায়ের। সাতক্ষীরা সদর থানার ওসিা গোলাম মোহাম্মদ এর দায়েরকৃত মামলার সকল আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ এর ১৭ আগস্ট শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক, জেলা জজ আদালত চত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্বর, বাস টার্মিনাল ও খুলনা মোড়সহ পাঁচটি স্থানে একযোগে এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বোমা হামলাকারী শহরতলীর বাঁকালের দলিলউদ্দিন দফাদারের ছেলে নাসিরুদ্দিন দফাদার প্রত্যক্ষদর্শী বাকাল ইসলামপুর চরের রওশানের দেয়া বিবরণ মতে ধরা পড়ে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাতক্ষীরার রসুলপুরে জেএমবির ঘাটি চিহ্নিত করা হয়। এই সূত্র ধরে ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিনসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে ঢাকায় জেআইসিতে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) এ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া ছাড়াও জেএমবির বহু গোপন তথ্য জানায় তারা। পরে তাদের ফিরিয়ে আনা হয় সাতক্ষীরায়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষনা করার পরও দেশজুড়ে বোমা হামলা চালানোর অভিযোগে তৎকালিন সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ বাদি হয়ে ২০০৫ সালের পহেলা অক্টোবর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৯(৮) ও ২০(৩) ধারায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বাংলাদেশের অন্য জেলে থাকা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানিসহ কয়েকজনকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ।

২০০৬ সালের ১৩ মার্চ সিআইডি সবগুলি মামলায় ১৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়। সে বছরই মামলাগুলি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয়। যথা সময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৭ এর ২৫ জুন মামলাগুলি খুলনা থেকে ফেরত আসে সাতক্ষীরায়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেরুয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে মামলা গুলির বিচার কাজ শুরু করেন। সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলাটিও ২০০৮ সালে বিচার শুরু হয়। এ সব মামলায় ১৪ জনের সাক্ষী গ্রহণ করা হয়। তবে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ এর দায়েরকৃত মামলায় কেবলমাত্র দু’জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

আসামিদের মধ্যে শায়খ রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে এসব মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বাঁকাল ইসলামপুরের নাসিরুদ্দিন দফাদার ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর মস্তিস্কের রক্ষক্ষরণজনিত কারণে সাতক্ষীরা কারাগারে মারা যান। আসামীরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করায় মামলার রায় হতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লেগে যায়।
সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনাকারি সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদ জানান, দেশব্যাপি বোমা হামলার মধ্যে সাতক্ষীরার ৫টি স্থানে হামলার ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়। এদের মধ্যে ১৪ জনের সাজা ও এক জন খালাস পায়। আমরা আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।

আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ রায় ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

তবে মামলার রায় সম্পর্কে অনুভুতি জানাতে যেয়ে দেশব্যাপি বোমা হামলা মামলার সাতক্ষীরায় প্রথম আসামী সনাক্তকারি বাঁকাল ইসলামপুর চরের রওশান আলী বলেন, এ রায়ে তিনি খুশী। তবে যেভাবে সাজা হয়েছে তাতে কয়েকজন আসামীর সাজার চেয়ে হাজতবাসের মেয়াদ অনেক বেশি হয়ে গেছে। দ্রুত বিচার শেষ হলে তাদেরকে বেশি সাজা খাটতে হতো না।

আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক আনিছুর রহিম ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, দেরীতে হলেও ১৫ বছর পর এসব মামলার সাজা হওয়ায় জঙ্গীবাদ আর সহজে মাথা চাড়া দিতে পারবে না। তবে তারা সাতক্ষীরার গুড়পুকুর মেলায় বোম হামলা মামলা দু’টির দ্রুত বিচার শেষ করার দাবি জানান।

খুলনা গেজেট/এনএম/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!