খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৫ মে, ২০২৪

Breaking News

  সুন্দরবনের গহিনে জ্বলছে আগুন

সাতক্ষীরা-খুলনায় সুপেয় পানি ও ল্যাট্রিনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের দাবি

সাতক্ষীরা ও তালা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, প্রতিবছর ল্যাট্রিনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং নারী ও প্রতিবন্ধীদের ওয়াশ অধিকার নিশ্চিতকরণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে কেন্দ্রীয় পানি কমিটির নেতৃবৃন্দ।

বুধবার (৩০ জুন) সকালে কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এমিএম শফিকুল ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপ্পী ও বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবিরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রদান করা হয়।

এসময় সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুর রহিম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, সাংবাদিক গাজী জাহিদুর রহমান, উক্তরণ কর্মকর্তা হাসিনা পারভীন, এড. মোঃ মুনিরুদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সুপেয় পানির উৎস অনুসন্ধানের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে একটি ব্যাপক ভিত্তিক হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভে করা দরকার। এই সার্ভে প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় লাগসই প্রযুক্তিসহ বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, জেলা পরিষদসহ সরকারের খননকৃত ও সংরক্ষিত পুকুর গুলো পুনঃখনন ও এর পানি সারা বছর পানযোগ্য রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

একই সাথে প্রতিবছরের জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনবার্সনের জন্য বিশেষ করে দরিদ্র, হত-দরিদ্র, দলিত, প্রতিবন্ধী ও নারী প্রধান পরিবারগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল অতি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। এ অঞ্চলের মধ্যে সমগ্র সাতক্ষীরা জেলা ও খুলনা জেলার অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সুপেয় পানির সংকট ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। প্রায় ৪৫-৫০ লাখ অধিবাসী বিশেষ করে সাতক্ষীরাবাসী দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যায় ভূগছেন। ক্রমেই এ সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এর ফলে জনজীবন ও জীবন-জীবিকায় ও বসবাসে মারাত্মক ধরণের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও প্রতিবন্ধীদের এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

এ এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণ ভূ-গর্ভস্থ জলাধারের অভাব রয়েছে। এলাকার অবস্থান ব-দ্বীপ ভূমির নিচে হওয়ায় ভূ-গর্ভের জলাধারের জন্য উপযুক্ত মোটা দানার বালি বা পলির স্তর কম পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও পাওয়া গেলেও তার অবস্থান ভূমির এত গভীরে যে, সেখান থেকে মিষ্টি পানি উত্তোলন করা খুবই কষ্টসাধ্য ও ব্যয় বহুল।

এ ছাড়া পানিতে রয়েছে আয়রণ ও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি। বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যায় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ৭৯% নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

এছাড়া পদ্মা প্রবাহ থেকে এলাকার বিচ্ছিন্নতা এবং ব্যাপক ভাবে নোনা পানির চিংড়ী চাষের কারণে এলাকায় লবণাক্ততার তীব্রতা ক্রমশঃবৃদ্ধি পাচ্ছে। নোনা পানির চিংড়ী চাষে ভূ-পৃষ্ঠের পানির আধার গুলো যেমন লবণাক্ত হয়ে পড়ছে তেমনি ভূ-গর্ভস্থ পানিতেও লবণাক্ততার তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে এলাকায় বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ, পেটের পীড়া, আমাশয়, জ্বর, ডায়রিয়া এসব রোগ-ব্যাধি সব সময় লেগেই আছে।

জলাবদ্ধতা, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা এই এলাকার একটি নিয়মিত সমস্যা হলেও অপ্রতুল রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ প্রভৃতি কারণে এ এলাকায় দারিদ্র্যের হার অনেক বেশি। সমগ্র বাংলাদেশে যেখানে দারিদ্র্যের হার ২১.৬ শতাংশ সেখানে এ এলাকায় দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুন।

অধিক দারিদ্র্য পীড়িত এ এলাকায় খাবার পানি ক্রয় করা, একাজে ব্যাপক শ্রমঘন্টা ব্যায় করা এবং প্রতি বছর ল্যাট্রিন সংস্কার করা ও নতুন করে নির্মাণ করা সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টের।

এ অবস্থায় এলাকায় সুপেয় পানি ও ল্যাট্রিনের সরবরাহ সহজলভ্য করা হলে এলাকায় দারিদ্র বিমোচনে তা যেমন সহায়ক হবে তেমনি নারী ও প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!