খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে : ইসি রাশেদা
  ময়মনসিংহে বাসের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
  বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকচাপায় নিহত ৩, আহত আরও ২ জন
  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

সাতক্ষীরায় বড় গরুর বিক্রি কম, ছোট-মাঝারীর চাহিদা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

রাত পোহালেই রোববার (১০ জুলাই) পবিত্র ঈদ-উল আজহা। শেষ মুহুর্তে কোরবানীর পশু কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কোরবানি করতে ইচ্ছুক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। একইভাবে জেলার গরুর খামারীরা তাদের গরু বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে এবার বাজারে ছোট ও মাঝারী গরুর চাহিদা বেশি। ফলে বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় বিপাকে খামারীরা।

জেলার পশুর হাটগুলো থেকে খবর নিয়ে জানা গেছে, অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে অধিকাংশ বড় গরু। অন্যবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি হওয়ায় আর্থিক সঙ্গতির কারণে ক্রেতারা ছোট গরু কেনার দিকে বেশি ঝুকেছেন। এছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে সাত্কষীরার পশুর হাটে বাইরের বেপারী তেমন না আসায় বড় গরু বিক্রি হচ্ছেনা বলে জানান বিক্রেতারা। ফলে এবারও ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে গো-খামারীদের।

সাতক্ষীরা প্রাণীসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, এবার জেলায় কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৯০৭টি। আর কোরবানির জন্য মোট পশু মজুত রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৫টি। যা চাহিদার চেয়ে ৪৭ হাজার ৯৮টি পশু বেশি। জেলার সাত উপজেলার ৯ হাজার ৯৩০টি খামারসহ পারিবারিকভাবে এসব পশু লালন পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ২৮ হাজার ৮০৩টি, ছাগল ৭৪ হাজার ৪৯৯টি, ভেড়া ৩৭০৭টি ও মহিষ রয়েছে ৯৯৬টি। এসব পশু থেকে প্রায় ২৫ হাজার পশু সাতক্ষীরা থেকে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট দেবহাটার পারুলিয়া ও সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী আবাদের হাটে যাওয়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বরে জানা যায়, এবার হাটে দেশি ২ মণ বা আড়াই মণ ওজনের ছোট-ছোট গরুর বেশ চাহিদা রয়েছে। সাতক্ষীরার খামারে পালন করা বড় জাতের ফ্রিজিয়ান গরু সাধারণত সিলেট অঞ্চলে বিক্রি হয়। সিলেট অঞ্চলের ব্যাপারীরা সাতক্ষীরার আবাদের হাট,পারুলিয়া হাটসহ অন্যান্য হাট থেকে বড় জাতের গরু কিনে নিয়ে যান। কিন্তু সিলেট অঞ্চলে বন্যা হওয়ায় বড় জাতের গরু কেনা-বেচা নেই বললেই চলে।

গরু বিক্রেতা সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন, তিনি বাড়িতে পালন করা ৪টি গরু বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছিলেন আবাদের হাটে। কিন্তু দরদামে না বনায় একটাও বিক্রি করতে পারেননি। গতবারের চেয়ে গো-খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। খরচ অনুপাতে মণপ্রতি বিক্রি হওয়া লাগে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে ২৪ হাজার টাকার বেশি কেউ দাম বলছেনা। তাছাড়া তার কমপক্ষে ৮মণ ওজনের সবচেয়ে বড় গরুটা কিনতে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

গরু ক্রেতা বিনেরপোতা এলাকার রুবেল হোসেন জানান, গতবার গরুর দাম ছিল ২০ হাজার টাকা মণ। আর এবার ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা মণ। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার কোরবানিও করতে হবে। তাই অর্থের সাথে সঙ্গতি রেখেই দেড় মণ ওজনের ছোট একটি দেশি গরু কিনেছি।

গরু ব্যবসায়ী পৌরসভার বকচরা এলাকার রনি ইসলাম জানান, খামার থেকে ফ্রিজিয়ান জাতের গরু কিনে এনেছি। লাভ তো দূরের কথা, বড় গরু কেউ ছুঁয়েই দেখছেনা। সিলেট অঞ্চল থেকে প্রত্যেক বছর বহু সংখ্যাক বেপারী আসতো বড় গরু কিনতে। কিন্তু এবার ওই অঞ্চলে বন্যা হওয়ায় কোনো বেপারী আসেনি। তাই বড় গরুর ক্রেতা নেই।

এদিকে এবারের কোরবানি ঈদে সাতক্ষীরায় আলোচিত গরুর তালিকায় ছিল ‘রাসেল বস’। ভারতীয় লাল সিন্ধি জাতের এই ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ১০ ইঞ্চি, উচ্চতা ৫ ফুট, ওজন ২৩ মণ। কোরবানিতে এই বিশাল ওজনের ষাঁড়টি সারা ফেলবে বলে আশা করেছিলেন গরুটির মালিক সাতক্ষীরা সদরের কুশখালী ইউনিয়নের আড়ুয়াখালী গ্রামের আব্দুর রহিম সরদার। কিছুদিন আগে গরুটির দর ৯ লাখ টাকা উঠলেও বর্তমানে ৪ লাখ টাকার বেশি বলছেন না কেউ। প্রত্যাশিত অনুযায়ী দর না পাওয়ায় একান্তই বাধ্য হয়ে জেলার বিভিন্ন গরু হাটে ‘রাসেল বস’কে নিয়েও বিক্রি করতে পারেননি আব্দুর রহিম।

জেলা শহরে বিক্রি করতে না পেরে বিগত কয়েকদিন ধরে গরুটি বিক্রির জন্য খুলনার পশু হাটে গিয়েছিলেন তিনি। তবে এখনও পর্যন্ত গরুটি অবিক্রিত রয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগের বছরও দাম কম হওয়ায় রাসেল বসকে বিক্রি না করে ফিরিয়ে আনা হয়। এদিকে ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি থাকলেও বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন গরুর মালিক আব্দুর রহিম।

আবাদের হাট গরুর হাটের ইজারাদার হাবিবুর রহমান বলেন, পশু কেনা-বেচা এবার সেভাবে জমেনি। অন্যবার প্রতিদিন কমপক্ষে ৪শ’ গরু বিক্রি হতো। আর এবার বড়জোর টেনে-টুনে ১ থেকে ২শ’ গরু বিক্রি হচ্ছে। তাও বড় গরু প্রায় বিক্রিই হচ্ছে না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবিএম আব্দুর রউফ জানান, জেলায় পশু সংকট নেই। কয়েকমাস আগে থেকে আমরা খামারীদের দিকে নজর রেখেছি, যাতে অনঅনুমোদিত ওষুদ খাইয়ে কেউ গরু মোটাতাজা করতে না পারে। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবছর গরুর দাম অন্যান্যবারের চেয়ে একটু বেশি বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী ১৩টি পয়েন্ট (খাটাল) দিয়ে ভারত থেকে আসত হাজার-হাজার গরু। সাতক্ষীরা থেকে এসব ভারতীয় গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। কিন্তু বাংলাদেশে গরু পাটাতে বিজেপি সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাতক্ষীরায় ভারতীয় গরু আসা একেবাওে বন্ধ হয়ে গেছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!