সাতক্ষীরায় ষষ্ঠ শ্রেণীর দু’ ছাত্রকে অফিসে ডেকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সদরের তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে। সোমবার (১৩ জুন) দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
আহত এক ছাত্রকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নির্যাতনের প্রতিবাদে এলাকাবাসী ওই প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
এদিকে প্রধান শিক্ষককে বাঁচাতে থানার মধ্যে ঢুকে স্কুলের সভাপতি ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম নির্যাতিত এক ছাত্রের অভিভাবকের হাত থেকে অভিযোগপত্র কেড়ে নিয়ে বিদ্যালয়ে শালিসে বসতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তালতলা গ্রামের বাহারুল ইসলামের ছেলে তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র জাহিদ হোসেন জানান, একই গ্রামের সাব্বির হোসেন ও সেসহ পাঁচজন ছাত্র সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় পিওন সাজু এসে তাদেরকে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়া মাত্র প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিম তাকে ও সাব্বিরকে কিল, চড়, ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করে। পরে তাদেরকে ৪০ বার করে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। এরপরও তাকে দ্বিতীয় দফায় আবারো মারপিট করা হয়। খবর পেয়ে তার বাবা এসে তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
মাগুরা গ্রামের বাবুর ছেলে তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির হোসেন জানায়, জাহিদের সঙ্গে তাকেও মারপিট করা হয়েছে। তবে নিজের ত্রুটির জন্য প্রধান শিক্ষক তার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
আহত জাহিদ হোসেনের বাবা বাহারুল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, ছেলেকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে থানায় নিয়ে যান তিনি। পরে থানার সামনে আবু সাঈদের কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখে তিনি কর্তব্যরত অফিসারের কাছে জমা দেওয়ার আগেই ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম অভিযোগ পত্রটি কেড়ে নিয়ে তাকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কক্ষে নিয়ে এসে শালিসি বৈঠকে বসতে বাধ্য করেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে ফল ভাল হবে না বলে ইউপি সদস্য মনিরুল তাকে হুমকি দেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শালিস চলছিল।
তালতলা এলাকার মুজিবর রহমান, সাহেব আলীসহ কয়েকজন জানান, দুই ছাত্রকে মারপিটের ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দুপুর একটার দিকে প্রধান শিক্ষকের অফিসকক্ষের বাইরে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অবরুদ্ধ করে রাখে। বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সেখানে কোন পুলিশ যায়নি। তবে মনিরুল মেম্বর ও মিন্টু প্রধান শিক্ষককে তার অফিস থেকে বের করে মামলা বন্ধে থানার দিকে রওনা দেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিম ইতিপূর্বে ছাত্র নির্যাতনের মামলায় জেল খেটেছেন।মানবপাচারের মামলায়ও তিনি নড়াইলে জেল খেটেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম ও দাতা সদস্য মিন্টুর জোরে বিদ্যালয়ে একের পর এক শিক্ষার্থী নির্যাতন করে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলে তিনি মাফ চেয়ে রেহাই পান।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ জানান, নির্যাতনের ঘটনায় জখম জাহিদ হোসেনের বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখছেন।
এ ব্যাপারে তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিমের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম মারপিটের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) বিশ্বজিৎ অধিকারী সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই