সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় থানায় এখনো কোন মামলা হয়নি। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে আহত চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন।
আহত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের জয়াখালী গ্রামের শেখ আবু দাউদ মাস্টারের ছেলে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্যামনগরের এক জনপ্রতিনিধি জানা, বিগত ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে আব্দুর রহিম শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ছিলেন মোঃ রেজাউল কিরম এবং বিএনপি প্রার্থী ছিলেন মোঃ শাহ আলম। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী শাহ আলম দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তৃতীয় স্থানে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ রেজাউল কিরম। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহিম এর চেয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ভোট কম পান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি ছিলেন প্রচন্ড চাপের মধ্যে। নানা ভাবে তাকে হয়রানি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এজন্য তিনি উপজেলা আ’লীগের একজন নেতার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করতেন। ইউনিয়নে তার জনপ্রিয়তার কোন ঘাটতি ছিল না। এই বিষয়টি একটি মহলের ঈর্ষার কারন হয়ে দাড়ায়। সে কারনে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তিনি যাতে ফের প্রার্থী হতে না পারেন এজন্য তার উপর চাপ ছিল।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার উপর হামালার ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। কিন্তু আমি বুঝে উঠতে পারিনি। আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। তিনি তার উপর হামলাকারিদের চিহ্নিত করে তাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ জানান, সন্ধ্যার দিকে চেয়ারম্যানসহ তারা তিন/চার জন পরিষদ ভবনে অবস্থান করছিলেন। তারা পরিষদের সভাকক্ষে বসে থাকলেও চেয়ারম্যান তার জন্য নির্ধারিত কক্ষে বসে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। এসময় চার/পাঁচ জন বোরকা পরিহিত মানুষ দ্রুত চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করেই তাকে উদ্দেশ্য করে এক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ঘটনাক্রমে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে দুবৃর্ত্তরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে চেয়ারম্যানের উপর চড়াও হয়ে তাকে কোপাতে থাকে। এসময় চেয়ারম্যানের চিৎকারে তারা ঘটনাস্থলে পৌছানোর পরপরই বোরকা পরিহিত হামলাকারীরা কক্ষ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। মাথা ও মুখে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় চেয়ারম্যানকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সোমবার সকালে তাকে নেয়া হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রাতেই পিবিআই ও র্যাব কর্মকর্তারা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, এ ঘটনায় এখনও র্পযন্ত থানায় কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেননি। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান, সহকারি পুলিশ সুপার (কালিগঞ্জ সার্কেল) ইয়াসিন আলী, সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। হামলার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন