নানা জল্পনা-কল্পনায় ১০দিন পর অবশেষে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোঃ সাহেদকে জন্মভূমি সাতক্ষীরা থেকেই গ্রেফতার করেছে র্যাব। আজ বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার সাকারবাজারের পাশে অবস্থিত লাবন্যবতি সামীন্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। সাথে সাথে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় খবর প্রকাশ/প্রচার হয়েছে। সাতক্ষীরার নিন্দিত সন্তান শিল্পপতি মোঃ সাহেদ এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বমিডিয়াতে ব্যাপক সমালোচিত।
আজ সকালেই বিট্রিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছে। তাদের প্রথম শিরোনাম “রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদকে আটক করেছে র্যাব”, পরে “রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ বোরকা পরে নৌকায় পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল, বলছে র্যাব”। এছাড়াও গত ৮ জুলাই সংবাদ মাধ্যমটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছিল, “রিজেন্ট হাসপাতালের মালিককে নিয়ে কতটা বিব্রত আওয়ামী লীগ” এ শিরোনামে। শুধু বিবিসি বাংলা নয়, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতেও স্থান পেয়েছে সাহেদকান্ড। এভাবে দেশ-বিদেশে নিন্দিত হচ্ছে সাতক্ষীরার সাহেদ।
কে এই সাহেদ ?
করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, অর্থ আত্মসাতসহ প্রতারণার মামলায় আসামি হঠাৎ করেই আলোচনায় আসেন মোঃ সাহেদ। রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে সাহেদের নানা কুকীর্তির খবর।
মোঃ সাহেদের পুরো নাম মোঃ সাহেদ করিম। বাবার নাম সিরাজুল করিম। সম্প্রতি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার ঠিকানা হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাগ, ঢাকা-১২১১। গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা জেলায়।
টেলিভিশন টকশোতে নিজেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে জাহির করতেন বহুমুখী প্রতারণায় অভিযুক্ত এই ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে সব জায়গায় পরিচয় দিতেন। সেই পরিচয় দিয়ে মোঃ সাহেদ বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতেও অংশ নিতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসএসসি পাস করলেও তারপর আর পড়াশোনা করেননি সাহেদ। তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি দুই বছর জেলে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালে ধানমন্ডির ১৫নং রোডে শুরু করেন এমএলএম কোম্পানি। অভিযোগ আছে, বিডিএস ক্লিক ওয়ান নামের ওই কোম্পানির শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় দু’টি মামলা, বরিশালে এক মামলা, বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিস এ চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার কারণে উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে।
এছাড়াও প্রতারণার টাকায় তিনি উত্তরা পশ্চিম থানার পাশে গড়ে তুলেছেন রিজেন্ট কলেজ ও ইউনির্ভাসিটি, আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটি। এর একটিরও কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ আছে। আর অনুমোদনহীন আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটির ১২টি শাখা করে হাজার হাজার সদস্যদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে সাহেদের বিরুদ্ধে। প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিতে নিজের কার্যালয়ে একটি টর্চার সেল গড়ে তুলেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, মোঃ সাহেদকে গ্রেফতারের খবর শোনার পরপরই জনপ্রতিনিধিসহ সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেন। তারা সাহেদের শাস্তি দাবি করছেন। ভার্সুয়াল জগতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে চিত্র ফুটে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরায় এবং পরদিন মিরপুর শাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ে। পরে হাসপাতাল দুটো সিলগালা করে দেয় র্যাব।
খুলনা গেজেট/এআইএন