মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ মুহূর্তে জমজমাট খুলনা সিটি করপোরেশন পরিচালিত কোরবানির পশুর হাট। মহানগরীর জোড়াগেট এলাকায় অবস্থিত এই কোরবানি পশুর হাটে মিলছে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের গরু। ক্রেতাদের সমাগমও অনেক বেশি।
ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা থাকলেও চলছে বড় গরুর ক্রেতা-সংকট। তাই দৃষ্টি ফেরাতে গরুর সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে ফ্রিজ ও মোটরসাইকেল। তাতেও সাড়া মিলছে না ক্রেতাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেসিসি পরিচালিত কোরবানির পশুর হাটে সব ধরনের গরু-ছাগল মিলছে। সেইসঙ্গে রয়েছে দুম্বাও। এই হাটে খুলনা বিভাগের নড়াইল সদর, কালিয়া, লোহাগড়া, সাতক্ষীরার তালা, পাটকেলঘাটা, যশোরের মনিরামপুর, বাগেরহাটের ফকিরহাট, খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, তেরখাদাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে খামারি ও ব্যাপারীরা গরু-ছাগল নিয়ে এসেছে। শেষ মুহূর্তে হাটে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে।
হাটের উত্তর পাশে বড় গরুর রয়েছে। সেখানে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে ‘কালো পাহাড়’-এর। কালো রঙের এই গরুটি হাটে শুরু থেকে আনা হলেও এখনো বিক্রি হয়নি। একটু সামনে যেতে দেখা হয় সাতক্ষীরার ‘সম্রাট’ আর ‘টাইগার’-এর সঙ্গে। সম্রাটের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সম্রাটকে কেউ কিনলে সঙ্গে তিন লাখ টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে।
সম্রাটের মালিক সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার খামারি আব্দুল আলীম বলেন, বড় গরুর চাহিদা খুবই কম। দুই দিন গরুটিকে নিয়ে এসেছি, কিন্তু ক্রেতার সাড়া পাইনি। তিন বছর ধরে গরুটিকে লালন-পালন করেছি। এর পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি। প্রাকৃতিক উপায়ে পশুটি লালন-পালন করেছি। দৈনিক ১৮ থেকে ২০ কেজি দানাদার খাবার খাওয়াতে হয়েছে। খৈল, কুড়া, ভুসি, ঘাস তো আছেই।
তিনি বলেন, খুলনার হাটে ন্যায্যমূল্যে আমার গরুটি বিক্রি হবে, সেই আশা করছি। সম্রাটের দাম চাচ্ছি সাড়ে ১২ লাখ টাকা। সাড়ে ৯ লাখ টাকা দাম উঠেছিল। এ জন্য সম্রাটের সঙ্গে একটি মোটরসাইকেল ঘোষণা করেছি।
পুরস্কার ঘোষণার উদ্দেশ্য হিসেবে তিনি জানান, আমি সন্তানের স্নেহে গরুটি লালন-পালন করেছি। যে আমার গরুটাকে ক্রয় করবে, তাকে আমি একটি সুন্দর জিনিস উপহার দিতে চাই, এটা আমার প্রত্যাশা।
অন্যদিকে টাইগারের দাম চান তিন লাখ টাকা। তবে প্রথমে টাইগারের দাম ৭ লাখ টাকা হাঁকানো হয়েছিল। প্রত্যাশিত ক্রেতা না মেলায় তার দাম এখন তিন লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। টাইগারের সঙ্গে একটি ফ্রিজ পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
টাইগারের মালিক সাতক্ষীরার খামারি রবিউল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা জেলার মোস্তাফিজ, সৌম্যসহ অনেক ক্রিকেটার রয়েছে। তারা টাইগার নামে পরিচিত। তাদের উদ্দেশ করে এবং সুন্দরবন এলাকায় বাড়ি ও গরুটির গঠন টাইগারের মতোই, সে জন্য তার নাম টাইগার রেখেছি। এর দাম চাচ্ছি ৩ লাখ টাকা। টাইগারের সঙ্গে একটি ওয়ালটন ফ্রিজ ফ্রি ঘোষণা করেছি।
তিনি আরও বলেন, টাইগারের ওজন হবে প্রায় ৮০০ কেজি। এটির দাম উঠেছে ২ লাখ ৭০ হাজার। এখন হাটে দাম ১ লাখ ৯০ হাজার থেকে ২ লাখ ১০ হাজার পর্যন্ত উঠেছে। প্রথম দিকে গরুটির দাম চেয়েছিলাম ৭ লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতাসংকট দেখে দাম তিন লাখ টাকা চাচ্ছি, সঙ্গে ফ্রিজ ফ্রি।
নড়াইল থেকে আসা খামারি আক্তার হোসেন বলেন, আজ চারটি গরু নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি হয়নি। আশা আছে শেষ মুহূর্তে সব কটি গরু বিক্রি হবে। বড় একটি গরু প্রায় ১০ মণ ওজন হবে। সেটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম উঠেছে। আমি সাড়ে ৩ লাখ চাচ্ছি।