নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়া এলাকায় ফেসবুকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে বিরুপ মন্তব্যের জেরধরে হামলা ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন ১৪ দলীয় জোট। শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে তারা দিঘলিয়া বাজারের ক্ষতিগ্রস্থ দোকান, সাহা পাড়ার বাড়িঘর ও মন্দির পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন।
এসময় ১৪ দলীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া। ১৪ দলীয় জোটের শরীক জাসদের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, সাম্যবাদি দলের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া, ১৪ দলীয় শরীক দলের প্রতিনিধিসহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডঃ সুবাস বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলুসহ জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মী, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় নেতৃবৃন্দ ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নগদ ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হয়েছে এটাকে বিছিন্ন ঘটনা বলে পাশ কাটানো কোন জায়গা নাই। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘটনার একটা যোগসুত্র আছে। প্রতিটি ঘটনাকে আমরা মনেকরি জঙ্গীবাদ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির একটি পরিকল্পিত ঘটনা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা আমরা এসেছি নড়াইলের এই পরিবার গুলোর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য। আমরা এর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করছি। ইতিমধ্য ৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আমাদের দাবী যারা, যে দলেই হোক, যে মাপের নেতাই হোক তাকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেওয়ার জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে, আমাদের শ্লোগান একটাই , ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার।
উল্লেখ্য গত ১৫ জুলাই শুক্রবার দিঘলিয়া সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা অশোক সাহার ছেলে কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে বিরুপ মন্তব্যে করেন। বিষয়টি জুম্মার নামাজের পর বিভিন্ন পেশার মানুষের নজরে আসে। এরপর বিক্ষুদ্ধ লোকজন দুপুরে অভিযুক্ত আকাশ সাহার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন।
ঘটনার জেরধরে বিকেল থেকে উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর বিক্ষুদ্ধ লোকজন একপর্যায়ে এলাকার দিঘলিয়া বাজারে ৪টি হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকান ভাংচুর করে ও সাহাপাড়ার গোবিন্দ সাহা, তরুণ সাহা, দিলীপ সাহা, পলাশ সাহাসহ ৫ টি বাড়ি ভাংচুর করে। এর মধ্যে গোবিন্দ সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের ঘর পুড়ে যায়। এছাড়া সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার ও আকরাবাড়ি মন্দির ভাংচুর করে বিক্ষুদ্ধরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এই ঘটনায় লোহাগড়া থানায় অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ এই মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। জেলা প্রশাসন নড়াইল অতিরিক্ত জেলা ম্যজিট্রেট জুবায়ের হোসেন চোধুরীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে । এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে।