সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকায় ইট ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। তিন ফসলি জমি থেকে বছরে একাধিকবার মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ায় কমে যাচ্ছে ফসলের উৎপাদন। সেইসাথে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, শ্যামনগর উপজেলা সদর ঘেঁষে বিভিন্ন গ্রাম এলাকার কৃষি জমিতে একের পর এক গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা। আর ইট তৈরির জন্য মাটি নেয়া হচ্ছে আশপাশের ফসলি জমি থেকে। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামীন সড়ক। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সর্বত্রই প্রতিদিন অবৈধভাবে আবাদি জমি ধ্বংস করে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। কৈখালী এলাকা থেকে ভেকু মেশিন (খনন যন্ত্র) দিয়ে অবৈধভাবে মাটি খনন করে গাড়িতে কৈখালী এবং গোডাউন মোড় থেকে নূরনগর পর্যন্ত নতুন নির্মিত রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত মাটি নেয়ার কারণে রাস্তার দুই পাশ ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়া জমির উপরের অংশের উর্বর মাটি ইটভাটায় চলে যাওয়ায় ফলন কমে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই এলাকার জমির মালিক ও কৃষকরা।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, শ্যামনগর উপজেলায় ১৪টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার অধিকাংশের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। নেই পরিবেশের ছাড়পত্র। একেকটি ইট ভাটার কারণে কমপক্ষে তিন একর ফসলি জমি নষ্ট হয়। এভাবে ১৪টি ইট ভাটায় প্রায় ৪২ একর জমি নষ্ট হয়েছে। এসব তিন ফসলি জমিতে বছরে প্রায় ৪ হাজার মন চাল উৎপাদন করা যেতো। একদিকে ভাটার কালো ধোঁয়া, অন্যদিকে মাটি ও ইট বোঝাই ট্রাকের কারণে শব্দ ও বায়ু দূষণ চরম আকার ধারণ করছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। অধিকাংশ ভাটায় সামান্য কয়লার সাথে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ ও টায়ারের কালি। এতে আশপাশের এলাকার মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। এসব ইট ভাটা কৃষি জমির অপূরণীয় ক্ষতি করছে।
স্থানীয়রা জানান, ইটভাটায় চলাচলকারী ট্রাকের কারণে সৃষ্ট ধুলায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ট্রাকে মাটি বহনের ফলে ওই মাটি রাস্তায় পড়ে রাস্তার ক্ষতিসহ বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এছাড়া যে হারে ফসলি জমি থেকে মাটি নেয়া হচ্ছে তাতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি আর অবশিষ্ট থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইট ভাটার কারণে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ এনামুল ইসলাম বলেন, এসব অবৈধ ইটভাটা খুব দ্রুত বন্ধ করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এভাবে ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করা হলে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভাটার জন্য মাটি কাটা হচ্ছে এমন একটি ফসলি জমির মালিক কৈখালী ইউনিয়নের বৈশখালী গ্রামের রোজিনা খাতুন বলেন, মাটির ভালো দাম পাওয়ায় জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছি ভাটা মালিকের কাছে। জমির ফসলে তেমন লাভ না হওয়ায় মাটি বিক্রি করে পুকুর খনন করছি।
উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের শ্যামাপদ সাহা বলেন, আমরা কৃষিকাজ করছি শৈশবকাল থেকেই। দাদা-বাবার হাত ধরে কৃষি কাজে হাতেখড়ি। আগে যে পরিমাণ জমিতে আমাদের পরিবার চাষাবাদ করত, এখন তার এক পঞ্চমাংশ জমিতে ফসল ফলাই। ইট ভাটায় মাটি নেয়ার কারণে এসব ফসলি জমি এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী মোহন কুমার মন্ডল বলেন, শ্যামনগরের উপকূলীয় এ অঞ্চল এমনিতেই নিচু। তাতে যদি এই এলাকার মাটি কেটে আরো নিচু করা হয় তাহলে এ অঞ্চল বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
তিনি আরো বলেন কৃষি জমির মাটি কাটার ফলে প্রতিবছর বেশ কয়েক শতাংশ হারে কমছে এ উপজেলার আবাদি জমির পরিমাণ। এছাড়া প্রতিবছর নদী ভাঙন ও নানা ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এই এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দূযোর্গের কারণে কৃষকরা তাদের জমিতে ঠিকমত ফসল উৎপাদন করতে পারে না। তার উপর এভাবে ইটভাটার জন্য ফসলি জমির মাটি কাটা অব্যহত থাকলে কৃষকরা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি ফসলি জমিতে ইটভাট বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খুলনা গেজেট/ বি এম এস