খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে : ইসি রাশেদা
  ময়মনসিংহে বাসের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
  বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকচাপায় নিহত ৩, আহত আরও ২ জন
  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

শেষ দিনে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ৩৭ জনকে নিয়োগ দিলেন চ‌বি উপাচার্য

গেজেট ডেস্ক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য শিরীণ আখতার দায়িত্বের শেষ দিনে অন্তত ৩৭ কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। নতুন উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে এই নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ নিয়ে গত তিন মাসে একই প্রক্রিয়ায় অন্তত ১০৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। উপাচার্যের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষক সমিতি আন্দোলন শুরু হলে একের পর এক নিয়োগ দেন তিনি।

অধ্যাপক শিরীণ আখতারের শেষ কার্যদিবসে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের ছয়জন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সাতজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকা ফতেপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়োগের অফিস আদেশ যাচাই করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক শিরীণ আখতারকে সরিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু তাহেরকে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ১৯তম উপাচার্য হিসেবে বুধবার তিনি দায়িত্ব নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শূন্য পদে নিয়োগ দিতে হলে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। এরপর প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে মৌখিক অথবা ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে হয়। পরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের আবেদন অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়। সিন্ডিকেট নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। কিন্তু বিদায়ী উপাচার্যের শেষ দিনে এসব নিয়মনীতি মানা হয়নি।

সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতার উপাচার্য পদে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দেন ১৭২ জনকে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির ১১৫ আর চতুর্থ শ্রেণির ৫৭ জন। এর বাইরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৩৬৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক ১৩০ জন। অন্যরা কর্মচারী।

শেষ সময়ে উপাচার্যদের নিয়োগের তৎপরতা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২১ সালে ৬ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহান তাঁর শেষ কর্মদিবসে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ ১৩৮ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরে এসব নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। অধ্যাপক শিরীণ আখতারের আগে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীও শেষ সময়ে এসে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁরা এখনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত।

নিয়োগ পেলেন ছাত্রলীগ ও স্থানীয়রা

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অধ্যাপক শিরীণ আখতারের শেষ কর্মদিবসে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগসংক্রান্ত এসব অফিস আদেশ যাচাই–বাছাই করে দেখা গেছে, ঊর্ধ্বতন সহকারী, উচ্চমান সহকারী, নিম্নমান সহকারী, কম্পিউটার ল্যাব সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী, অফিস পিয়ন, বুক বাইন্ডার, ভোজনালয় সহকারী, সর্টার, পেশ ইমাম, ঝাড়ুদার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির ১৫ জন ও চতুর্থ শ্রেণির ২২ জন। ছয় মাসের জন্য এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেতন ধরা হয়েছে দৈনিক সর্বনিম্ন ৩৩০ থেকে ৬৫০ টাকা।

নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন সাবেক সহসভাপতি আবু বকর, ইবনুল নেওয়াজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিমা আক্তার, সবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহীম হোসেন ওরফে সাদ্দাম, ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী নাঈম আজাদ ও বাদল কান্তি চাকমা। তাঁরা সবাই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

এ ছাড়া তাঁদের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকা ফতেপুর ইউনিয়নের মদনহাট গ্রামের মো. সোলাইমান, মোহাম্মদ জুবায়ের ও পাপড়ি রুদ৶, জোবরা গ্রামের মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, ফতেপুর গ্রামের পারভীন আখতার, জয়নাল আবেদীন, ইব্রাহিম আহমেদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সবাই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

এসব নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে জানতে চেয়ে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য শিরীণ আখতারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেন এই প্রতিবেদক। তবে তিনি রিসিভ করেননি। বিষয়বস্তু লিখে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা, তবু নিয়োগ

২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মজুরি কিংবা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসির সদস্যের দায়িত্ব পালন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য মো.আবু তাহের সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের শেষ কর্মদিবসে নিয়োগের প্রসঙ্গে বলেন, এসব নিয়োগ আইনগত নয়। নিয়োগের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রশাসনের সব পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হবে। এতে এসব নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এভাবে নিয়োগ দিয়ে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বোঝা রেখে গেছেন বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি ও প্রবীণ শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ সিকান্দার খান। তিনি বলেন, ‘অতীতেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেষ সময়ে আইন ভেঙে নিয়োগ দিয়েছেন । কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখনো কিছু হবে না। তাই এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটে। ইউজিসির উচিত নিয়োগের এসব বিষয় মার্জনা না করে যিনি এ নিয়োগ দিয়েছেন, তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনা। নিয়োগ দিয়ে যে অন্যায় করেছেন, সেটা সবার সামনে আনা।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!