খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া
  ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা ৬ মামলা বাতিল করেছে হাইকোর্ট
খুলনায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের শ্রমিক সমাবেশ

শেখ হাসিনা পালিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি অপরাধী : পরওয়ার

গেজেট ডেস্ক 

বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেল ৩ টায় খুলনা মহানগরীর শিল্পাঞ্চল খালিশপুরস্থ বিআইডিসি রোডে অবস্থিত শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কার্যালয়ের সামনে খুলনা মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নামে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুইশ’ টির বেশী মামলা হয়েছে। যে ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা বিচার দিয়ে আমাদের নেতাদেরকে ফাঁসি দিয়েছিলেন। সেই ট্রাইব্যুনালে আপনাদের বিচার হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, আপনারা তো মাওলানা নিজামী, আল্লামা সাঈদী ও মুজাহিদদের বিচার করতে গিয়ে মিথ্যা গাল-গল্প, মিথ্যা এজহার, মিথ্যা স্বাক্ষী, মিথ্যা বাদি, মিথ্যা বিচারক বানিয়ে আপনারা ফাঁসি দিয়েছেলন। শেখ হাসিনার ফাঁসি দিতে মিথ্যা লাগবে না। সত্য ঘটনা দিয়ে শতবার তাকে ফাঁসি দেয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েই প্রমাণ করেছেন, তিনি অপরাধী।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওদের হাতে গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যম কিছুই নিরাপদ নয়। যে কারণে ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণবিষ্ফোরনের মুখে তাকে এমনভাবে পালিয়ে যেতে হয়েছিল যে, দুপুরের খাবার খাওয়ার সুযোগ পাননি। লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের খাবার কেড়ে নিয়ে, মিল বন্ধ করে দিয়ে তাদেরকে বেকার করে যে অপরাধ শেখ হাসিনা করেছেন তার ফল তাকে ভোগ করতে হয়েছে।

খুলনা মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারি পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মাস্টার শফিকুল আলম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিএল কলেজ ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মুনসুর আলম চৌধুরী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের অঞ্চল সহকারী পরিচালক খান গোলাম রসুল, বিএল কলেজের সাবেক ভিপি এডভোকেট শেখ জাকিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, খালিশপুর থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ইকবাল হোসেন, দৌলতপুর থানা আমীর ফোরকান উদ্দিন মিঠু, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহফুজুর রহমান, ক্বারি আব্দুল্লাহ আল আজাদ প্রমুখ। এ ছাড়া সমাবেশের ফাকে ফাকে টাইফুন শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা ইসলামী সংগীত পরিবেশন করবেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, বিগত পনের বছরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীর ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছিল ফ্যাসিবাদী সরকার। খালিশপুরের শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের অফিস জ্বালিয়ে দিয়ে প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগের কাছে এদেশের কোন মানুষই নিরাপদ নয়। সর্বশেষ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে শেখ হাসিনা নিজেই নিষিদ্ধ হয়েছেন। দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর ইচ্ছার ওপর কারও ইচ্ছা যে পূরণ হয় না সেটিই এর বড় প্রমাণ।

সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, যেখানকার মাল সেখানেই চলে গেছেন। এখন মানবাতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ইন্টারপোলে ওয়ারেন্ট জারী করা হয়েছে। শেখ হাসিনা খুব সাবধানে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি কোথায় থাকবেন, কি করবেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন?

তিনি আরও বলেন, আপনি প্রধানমন্ত্রী। আপনি যদি সৎ সহাসী হন, এতো উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে থাকেন। তাহলে ৫ আগস্টের পরে আপনারা পালিয়ে গেলেন। ৩০০ আসনের এমপি একজনকেও খুঁজে পাওয়া গেল না। পালালেন কেন? পালায় কারা? পালায় চোর, ডাকাত ও খুনিরা। যারা সত্যের পথে থাকে তারা কখনো পালায় না। অপনারা পালিয়ে প্রমাণ করেছেন। আপনারা অপরাধ করেছেন। জাতির কাছে ক্ষমা চান। তাদের কারণে গত ১৫ বছর জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারেনি। এ বাড়ি, সে বাড়ি, আগানে-বাগানে, বিলে-খালে পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অপনাদের হাতে দেশের মানুষের গণতন্ত্র-স্বাধীনতা, মূল্যবোধ, ভোটাধিকার কোন কিছুই নিরাপদ ছিলো না। মানুষ ১৪, ১৮ ও ২৪ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। আপনারা ভেবেছিলেন কতৃত্ববাদী শাসন করে আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। বিএনপি-জামায়াতসহ সকল ফ্যাসিবাদ বিরোধী দল আন্দোলনে পুলিশ দিয়ে, মামলা দিয়ে, গ্রেপ্তার করে, হত্যা করে আন্দোলনকে বার বার ব্যর্থ করার চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন ছাত্র সমাজ, রংপুরের আবু সাঈদের মতো হাসিনার বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে বললো, হাসিনা তুমি পরাজিত। বাংলাদেশের আবু সাঈদরা বিজয়ী হয়ে গেলো। রক্তের স্রোতের ওপর দাড়িয়ে আমরা মুক্তির স্বাধ গ্রহণ করছি। এই আন্দোলনে ১৭০০ মানুষ জীবন দিলো। ৪০ হাজার লোক আহত হয়েছে। হাত, পা, চোখ, কান হারিয়ে অনেকেই চিকিৎসা করাতে পারছেনা। এই আত্মদান ও রক্তদানের ঋণ আমাদেরকে শোধ করতেই হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, বিদেশীদের কাছে শেখ হাসিনা ‘খাবিসা’ তথা খারাপ মহিলা হিসেবেই পরিচিত। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসহ দেশের মিল কল-কারখানা বন্ধ করে দিয়ে শেখ হাসিনা শ্রমজীবী মানুষের সাথেও প্রতারণা করেছেন। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের কাছে মিলগুলো চালু করে আবারও খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!