খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১২ মে, ২০২৪

Breaking News

  বাগেরহাটের শরণখোলায় বজ্রপাতে দুই শ্রমিক নিহত, আহত ৬
  দিনাজপুরে ট্যাংক লরির চাপায় নিহত ২

শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা : সাবেক এমপি হাবিবসহ তিনজনকে ১০ বছর করে কারাদন্ড

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাবেক সাংসদ ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিন জনের বিভিন্ন ধারায় সর্বোচ্চ ১০ বছর, একজন আসামির ৯ বছর ও বাকি ৪৬ আসামিকে সর্বনিম্ন ২ থেকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১২ মিনিটে এক জনাকীর্ণ আদালতে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হুমায়ুন কবীর এ রায় ঘোষণা করেন। ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ ১৯ বছর পর এই মামলা বিচার কার্যক্রম শেষ হলো।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মোঃ আব্দুর রকিব মোল্ল্যা, মোঃ আক্তারুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল মজিদ, মোঃ হাসান আলী, ময়না, মোঃ আব্দুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মোঃ জহুরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, অ্যাড. মোঃ আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, মোঃ আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মোঃ সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, রকিব, ট্রলি শহীদুল, মোঃ মনিরুল ইসলাম, শেখ কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, দিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, আব্দুল গফফার গাজী, রিঙ্কু, অ্যাড. মোঃ আব্দুস সামাদ, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন। রায় ঘোষনার সময় এই ৩৪ জন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন।

এছাড়া পলাতক অবস্থায় ১৬ জনের সাজা হয়। তারা হলেন আব্দুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, মোঃ আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, সঞ্জু , নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কণক, ও মোঃ মাহাফুজুর রহমান।

এদের মধ্যে সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আরিফুর রহমান ও রিপনকে ১০ বছর, কলারোয়া উপজেলার যুবদলের সা‌বেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বাচ্চুকে ৯ বছর ও বাকি ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন ধারায় ২-৭ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

এই রায়ে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় অসামি পক্ষের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট শাহানারা আক্তার বকুল বলেন, এই রায়ে আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। আশাকরি উচ্চ আদালত অবশ্যই আমাদেরকে ন্যায় বিচার দিবেন।

অসামি পক্ষের অপর আইনজীবী সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অ্যাড. আব্দুুল মজিদ বলেন, এই মামলায় ১১টি সেকশনে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছিল। মামলার বিচারে ৬টি সেকশনে বিভিন্ন ধারায় আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। মামলার বিচার কার্যক্রমের আগে থেকে ১১ জন আসামি পলাতক ছিল। ৫ জন আসামি বিচার শুরুর পর পালিয়ে যায়। গত ২৭ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে আদালতের নিদের্শে কাঠগোড়ায় থাকা ৩৪ আসামিকে কারাগারে নেয়া হয়। রায়ের কপি পেলে আমরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ এএফএম রুহুল হক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায়ে প্রমান হয়েছে সাতক্ষীরা জেলায় কোন সন্ত্রাসীর আশ্রয় নেই। এই রায়ের ফলে সাতক্ষীরা তথা দেশ কলঙ্ক মুক্ত হয়েছে। রায়ে আমরা খুশি।

রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনির বলেন, ঘটনার দিন বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিবুর ইসলাম হাবিবের পরামর্শে ও নির্দেশে প্রায় ৪/৫শ’ নেতাকর্মী ও বিএনপির সন্ত্রাসীরা গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছিল। এই হামলার বিচার শুরু হয়েছিল, আজকে রায়ের মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটল। সাতক্ষীরার জনগণ কলঙ্কমুক্ত হল। আজকে রায়ে হাবিবুর ইসলাম হাবিব, আরিফ এবং রিপন এই তিনজনকে ১০ বছর এবং বাচ্চু এবং রঞ্জুকে ৯ বছর করে সাজা দিয়েছে। সর্বনিম্ন সাড়ে চার বছর সাজা দেওয়া হয়েছে এবং অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেওয়া হয়েছে। কাউকে খালাস দেওয়া হয়নি। আজকে এই রায়ে দেশে ন্যায় বিচার কায়েম হল। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং গণতন্ত্র সুদৃঢ় হয়েছে। এই রায়ে আমরা খুশি।

সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আমল কুমার রায় জানান, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখতে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা একটি যাত্রীবাহী বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।

এ ঘটনায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০-৭৫ জনকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান সাতক্ষীরা-১ অসনের সাবেক সাংসদ বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব সহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০১৭ সালে আসামি পক্ষ মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত করে। দীর্ঘ তিন বছর পর আসামি পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলা ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। মামলায় ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে উপরোক্ত রায় প্রদান করা হয়।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!