খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯১৫
  ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে বাবা-মেয়ের মৃত্যু
  এমন রাষ্ট্র গঠন করতে চাই যা নিয়ে দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায়, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  আজ মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা-বিপণনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

শিবসার শহররক্ষা বাঁধ ডুবে বিভিন্ন গাছের মৃত্যু, বাঁধ সরাতে নির্দেশ

শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা

নদীর মধ্যে অপরিকল্পিত শহররক্ষা বাঁধে সরকারি চরভরাটি জমি দখলের পাশাপাশি পানি বন্দি হয়ে মরে যাচ্ছে পাইকগাছার শিবসা চরের বিস্তীর্ণ এলাকার বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল পরিমাণ গাছ। বনবিভাগ বলছে, জোয়ার-ভাটা না থাকায় বাঁধের বদ্ধ পানিতে চাপা পড়ে মরে যাচ্ছে গাছগুলি। এমন পরিস্থিতিতে বনায়নের গাছ বাঁচাতে ইউএনও পৌরসভাকে ৭ দিনের মধ্যে বাঁধ সরিয়ে নিতে বলেছেন।

এরআগে পৌরসভার নিম্নাঞ্চলে শিবসার লবণ পানির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পৌরসভা শহররক্ষা বাঁধের পরিকল্পনা গ্রহন করে। গত ২৩ এপ্রিল খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এ বাঁধের শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর শিবসা ব্রীজ এলাকা থেকে থানা পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মিটার বাঁধের উদ্বোধন করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু।

শিবসা নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত পাইকগাছা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। এরপর গত ২৫ বছরেও কোন শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। নদীর নব্যতা হ্রাসে প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢুকে পড়ে পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চলে। এতে বিভিন্ন সময় সদরের কোন কোন এলাকার দোকান-পাট ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জনভোগান্তি বাড়ে প্লাবিত এলাকাসমূহে।

পাইকগাছা পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্র ঘেঁষে প্রবাহিত শিবসা নদী ভরাট হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। সদরের শিববাটী ব্রীজ থেকে হাড়িয়া নদী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘে শিবসা ভরাট শুরু হয় আরো আগে। তবে শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীরা নানা উপায়ে ভরাটি জমি দখল শুরু করে। ঐসময় দখল ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ভরাটি অংশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠে বনায়ন। এতে একদিকে যেমন বন্ধ হয় দখল প্রক্রিয়া অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এরপরও বন্ধ ছিলোনা দখল প্রক্রিয়া। নিত্য নতুন নানান পদ্ধতিতে ক্রমশ ছোট ছোট অংশে শুরু হতে থাকে দখল প্রক্রিয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজার সম্প্রসারণ, বর্জ্য অপসারণসহ নানা কর্মকান্ড পৌর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয় বিভিন্ন মহলে।

এদিকে নদীর মাঝ বরাবর দিয়ে উক্ত শহর রক্ষা বাঁধের ফলে জোয়ার-ভাটার পানি বাঁধ অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারলেও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বাঁধ এলাকা। ফলে এর আগে চভেরাটি জমির দখল ঠেকাতে গড়ে তোলা বনায়ন প্রকল্পের শত শত গাছের মৃত্যু শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বাঁধের মধ্যে খন্ড খন্ড করে বেঁধে নিয়ে শুরু হয়েছে মাছ চাষ।

এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় জানান, শিবসা নদীর চর ভরাটি জায়গায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনাঞ্চলীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে বনায়ন করা হয়েছে। যার মধ্যে বাইন, কেওড়া, ওঁড়া, সুন্দরী ও গোলপাতাগাছ রয়েছে। এ গাছগুলো জোয়ার-ভাটার সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা হলে জলাবদ্ধতার কারণে সেখানকার সব গাছ মরে যাবে। ইতোমধ্যে গাছ মরা শুরু হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব এনিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে ক্রমশ সব গাছের মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে বলেও দাবি তার।

উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, শহররক্ষা বাঁধের নামে নদীর বুক চিরে অপরিকল্পিতভাবে দেওয়া বাঁধটি সংশ্লিষ্ট সব ক্ষতির জন্য দায়ী। তিনি বলেন, পরিকল্পিত উপায়ে শহরের জনবসতির পাশ দিয়ে বাঁধটি দেওয়া হলে দখল ঠেকানোর পাশাপাশি বনায়নের গাছগুলোও বেঁচে থাকতো। তিনি বাঁধটি অপসারণপূর্বক জনবসতির পাশ দিয়ে গড়ে তোলার জন্য পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এ্যড. প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলেন, সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে শহর রক্ষা বাঁধ দেয়ার নামে নদী দখল করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ে নদীর নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি শহর রক্ষায় নির্মিত বাঁধ অভ্যন্তরের দখল প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এতে নদী সংকুচিত হয়ে উপচে পড়া পানিতে পৌর এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পৌরসভার প্যানেল মেয়র শেখ মাহবুবুর রহমান রঞ্জু বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাঁধ অপসারণের কথা বলেছেন। যতদ্রুত সম্ভব বাঁধটি সোজা করতে উদ্যোগ গ্রহন করবেন বলে জানিয়ে বলেন, তারা কোন গাছের মৃত্যু চাননা।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, ‘নদীর জায়গা দখল করে শহর রক্ষা বাঁধ দেওয়া যাবে না। মানুষের প্রয়োজনে শহর রক্ষা বাঁধটি হতে হবে শহরের পাশ দিয়ে। বনায়ন ও নদীর ক্ষতি করে এমনভাবে বাঁধ দেওয়া যাবে না। এসময় তিনি বাঁধ অপসারনে পৌরসভাকে সাত দিনের সময় দিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাঁধ অপসারণ না করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা অপসারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু শহর রক্ষা বাঁধের উদ্বোধনের কথা জানিয়ে বলেন, তিনি নদীর মধ্য দিয়ে বাঁধ দেওয়ার কথা বলেননি। তবে শহর রক্ষা বাঁধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বনায়ন ও নদী বাঁচিয়ে বাঁধ প্রদানের কথা বলেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!