খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩ মে, ২০২৪

Breaking News

লাগাতার তাপদাহে পুড়ছে যশোর অঞ্চল

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

লাগাতার তাপদাহে পুড়ছে যশোর অঞ্চল। তীব্র রোদ ও গরমের কারণে রাস্তাঘাটে মানুষ কম বের হচ্ছেন। এ কারণে দুর্বিষহ উঠেছে যশোরের মানুষের জীবনযাত্রা। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। বিপর্যস্থ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আবহাওয়া অধিদপ্তর যশোর ও চুয়াডাঙ্গাসহ চার জেলায় হিট এলার্ট জারি করেছে। খুব প্রয়োজন না হলে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা।

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় মানুষের কাছে আমরা দ্রুত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কতা বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে যাচ্ছি। লোকজন যেন এ রোদে ঘর থেকে বের না হয়। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে প্রভৃতি।

যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটিস্থ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ৩টা নাগাদ যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৪০ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৭ এপ্রিল ছিলো ৪০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৬ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সকাল থেকেই তীব্র রোদ ও গরম অনুভূত হচ্ছে। এ অবস্থায় কাজে বেরিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। শহরের মুজিব সড়কে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন রিকশাচালক শ্রীরাম দাস। এদিন সকাল আটটায় তিনি রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। রোদের দাপটে লোকজন বাইরে কম বের হচ্ছে। তাই আয় রোজগার কমেছে। প্রতিদিন রিকশা মালিককে আড়াইশ’ টাকা, নিজের দুপুরের খাবার, চা নাশতার খরচ মিলিয়ে আগে ৩৫০ টাকা আয় করতে হবে। এরপর সংসার খরচ।

দড়াটানামোড়ের বাঙ্গি বিক্রেতা সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, তিনি ভ্যানে করে শহরে বাঙ্গি বিক্রি করছেন ৪০ থেকে ১০০ টাকা দরে। কিন্তু গরমে লোকজন বাইরে কম, তাই বিক্রি বেশি হচ্ছে না।

এদিকে, গরমের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাঁচ শয্যার বিপরীতে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভর্তি রয়েছেন ২৫ রোগী। যার মধ্যে ১১ জনই শিশু। বৃহস্পতিবার মোট রোগী ছিলো ১১ জন। এদিন নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। এ তথ্য দিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হোসনে আরা বেগম।
এদিকে, লাগাতার তাপদাহের কারণে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদের মধ্যে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার বিচিত্র মল্লিক। তিনি বলেন, এই গরমে হাসপাতালে ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথার রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।

যশোর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার অনুপম দাস বলেছেন,প্রচন্ড এ গরমে সুস্থ থাকতে হলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচুর পরিমানে পানি পান, সুতি কাপড়ের পোশাক ও ছাতা ব্যবহার করতে হবে। জরুরি কাজ না থাকলে দুপুরে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না।

 যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, এ সময়ে ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, হিট স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি হতে পারে। প্রচ- গরম থেকে মুক্তি পেতে কেউ যেন ডিপ ফ্রিজের পানি পান না করে। এ সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার প্রচুর পানি, ডাবের পানি, দেশি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। দিনমজুর বিশেষ করে কৃষকরা যেন বেলা ১১টার মধ্যে এবং বিকেলে তাপমাত্রা কমলে মাঠে কাজ করেন সেই পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার মামুন।

যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে গত ১৬ এপ্রিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলায় বাহাত্তর ঘন্টার হিট এলার্ট জারি করেছে। শুক্রবার এ সর্তকতার শেষদিন। তীব্র রোদ ও গরম থেকে মানুষকে সতর্ক করতে এ নিদের্শনা জারি করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষকে সাবধানে চলাচল করার পরামর্শ দেন তিনি।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!