খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৬ মে, ২০২৪

Breaking News

  চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রাকের সঙ্গে ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত
  রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২

যোগীপোলের ৬ গ্রামে পরিবার পরিকল্পনা সেবা এক মাস ধরে বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের আওতাধীন যোগীপোল ইউনিয়নের ৬ টি গ্রামের ৪ হাজার ৯৯৮ জন দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ শামছুদ্দিন মোল্লা অফিসের এক আদেশ বলে গত ২৪ এপ্রিল উক্ত ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও আয়াকে অন্যত্র বদলি করার পর থেকে ওই ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ করে সেবা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে ইউনিয়নের সেবাগ্রহীতা নব দম্পতি, গর্ভবতী, নবজাতক, শিশুসহ স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা গরীব অসহায় ও দরিদ্র্য জনগোষ্ঠী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যোগীপোল ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম দিঘলিয়া উপজেলার আওতাভুক্ত হলেও ইউনিয়নটি মূলতঃ খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানা এবং কিছু অংশ আড়ংঘাটা থানা এলাকার মধ্যে অবস্থিত।

ইউনিয়নের সেবা কার্যক্রমের আওতাভুক্ত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে যোগীপোল, জাব্দীপুর, তেলিগাতী, রাজাপুর, খানা বাড়ি, ফুলবাড়ী। এছাড়া ইউনিয়নের আওতায় রয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(কুয়েট), খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, খুলনা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি একটি নিম্ন আয়ের মানুষের শ্রম অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে সুপরিচিত। পাটকলসহ বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিকের বসবাস।

দীর্ঘদিন ধরে অত্র ইউনিয়নের দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠী ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে নিম্নোক্ত সেবাগুলো পেয়ে আসছিল।সেবাগুলোর মধ্যে ছিলো পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা, নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা পরিচর্যা, স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সেবা, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, ইপিআই টিকাদান, দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (আই ইউ ডি ইমপ্ল্যান্ট), বন্ধ্যা দম্পতিকে পরামর্শ প্রদান, স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক সেবা স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণকারী দম্পতির সন্তান জন্মদানের সক্ষমতার জন্য সেবা, বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা (কৈশোর প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা), মাসিক নিয়মিতকরণ ও গর্ভপাত সংক্রান্ত, গর্ভবতী, গর্ভোত্তর, প্রসবকালীন সেবা, স্বল্পমেয়াদী অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সেবা (খাবার বড়ি কনডম জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন) অত্র ইউনিয়নের দম্পতি উপরোক্ত সেবাগুলো নিতে প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে ভিড় জমাতো। এছাড়া সপ্তাহে একদিন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে স্যাটেলাইট সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমেও গর্ভবতী মা, নবজাতক ও শিশুসহ দরিদ্র্য জনগোষ্ঠী নিয়মিত সেবা গ্রহণ করত ।

কিন্তু গত ২৪ এপ্রিল খুলনা জেলা পরিবার পরিকল্পনার ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ শামছুদ্দিন মোল্লা অফিস আদেশ বলে উক্ত ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রমের সাথে জড়িত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও আয়াকে প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলি করেন। যার স্বারক নং ৫৯.১১.৪৭০০.০০০.১৯..০০১.২৩-৪১১ তাং ২৪/৪/২০২৩। এরপর থেকে উপরিউক্ত সেবাসমূহ হতে ইউনিয়নের দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত রয়েছে।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলার আওতাধীন ১২ টি ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এরমধ্যে ৪ টি ইউনিয়ন যথাক্রমে বারাকপুর, দিঘলিয়া, গাজীরহাট ও আড়ংঘাটা ইউনিয়নে নিজস্ব স্থায়ী ভবন রয়েছে। ৩ টি ইউনিয়ন সেনহাটি, পাবলা ও খালিশপুরের লাল হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ভবনে পরিচালিত হয়। শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে বয়রা ইউনিয়ন ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অবশিষ্ট চারটি ইউনিয়ন যোগীপোল, মহেশ্বরপাশা, গোয়ালপাড়া ও খালিশপুরে স্থায়ী ভবন না থাকার কারণে ঘর ভাড়া নিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

যোগীপোল ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকের কর্মীরাও দীর্ঘদিন তাদের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে ভাড়া বাসায় সেবা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। সর্বশেষ ওই ইউনিয়নের সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হতো খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গার উপর গড়ে ওঠা একটি স্থাপনার উপর। গত ৯ মার্চ খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষ কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের সময় উক্ত স্থাপনাটিও ভাঙ্গা পড়ে।

এদিকে যোগীপোল ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সাজ্জাদুর রহমান লিংকন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর ইউনিয়নে অতিদ্রুত পরিবার পরিকল্পনার স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।

একই দাবি জানিয়েছেন উক্ত ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ কবির হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য শেখ শরীফুল ইসলামসহ অন্যান্য ওয়ার্ডের সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যবৃন্দ এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

খুলনা গেজেট/ লিপু/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!