খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  প্রথম ধাপের উপজেলা ভোট শেষ, চলছে গণনা
  উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ : রিজভী
  তেঁতুলিয়ার খয়খাটপাড়া সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়, শত শত শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইয়েল, এমআইটিসহ অন্য শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরাইলের অমানবিক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে চলা এই বিক্ষোভ ক্রমান্বয়ে সহিংস হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ঠেকাতে দেওয়া হচ্ছে তহবিল বন্ধের হুমকি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।

বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শত শত শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এসব বিক্ষোভে এখন অনেক শিক্ষকও যোগ দিচ্ছেন। ওয়াশিংটনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হোয়াইট হাউজের কাছেই তাদের কর্মসূচি পালন করছেন। এ পরিস্থিতিতে ক্যালিফোর্নিয়ার শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। খবর রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, সিএনএনের।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তাঁবু খাটিয়ে ‘ক্যাম্প’ তৈরি করে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন। গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার বোমাবর্ষণের প্রতিবাদে সব ধরনের শিক্ষার্থী এসব প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে ফিলিস্তিন, আরব, ইহুদি ও মুসলমানদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীও রয়েছেন। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রথম গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সেখানে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনুশ শফিকের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে শুক্রবার ফ্যাকাল্টি সিনেটে ভোট হবে বলে জানিয়েছে সিএনএন। তার বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জেরে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে পুলিশকে অনুমতি দিয়ে তিনি কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

ইসরাইলবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের দ্য ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) প্রধান স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা এ অনুষ্ঠান আগামী ১০ মে হওয়ার কথা ছিল। এ ক্যাম্পাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইউএসসি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী, তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের উপস্থিতিতে ১০ মে নির্ধারিত স্নাতক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।

স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিলের ওই ঘোষণা দেওয়ার আগে এ মাসের শুরুর দিকে ইউএসসি বলেছিল, অজ্ঞাত নিরাপত্তা হুমকির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ি মুসলিম শিক্ষার্থী আসনা তাবাসসুমকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার অনুমতি দেওয়া যাবে না।

এমোরি ইউনিভার্সিটির মোট ২৮ শিক্ষার্থীকে বিক্ষোভরত অবস্থায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ১৩০ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইমারসন কলেজের ১০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইনডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে ৩৩ জনকে অবস্থান ধর্মঘটে অংশগ্রহণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস, বোস্টনের নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি, ইয়েল, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন ও মিনেসোটা ইউনিভার্সিটিতেও তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে শিক্ষার্থীরা।

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ মার্কিন প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে চলে যেতে বাধ্য করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলছে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে ডাকার পর সেখানে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতারের পর নতুন করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘গণহত্যা থেকে দূরে সরে যাওয়ার’ এবং গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের সমর্থনে অস্ত্র উৎপাদনে এবং অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোতে বৃহৎ অর্থ বিনিয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী চিসাতো মিমুরা বিবিসিকে বলেছেন, গাজায় গণহত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ ও ইসরাইলে অর্থায়নের ঘটনায় আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘তারা যা করছে তা এই গণহত্যার জন্য দায়ী। তারা যে ধরনের সুপরিচিত ভূমিকা পালন করছে, আমরা সেই বিষয়ে অবগত।’

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মিনিসোটার ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেসউইমেন ইলহান ওমর ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। এর আগে গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ইলহান ওমরের মেয়ে ইসরা হিরসিকে ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ। ইলহান ওমর বিবিসিকে বলেন, এই বিক্ষোভ মাত্র ৭০ জন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। যে কারণে বিক্ষোভ এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।’

ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ : কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলা বিক্ষোভ নিয়ে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী বলেছেন, তারা কলাম্বিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিরাপদ বোধ করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্য ইহুদি শিক্ষার্থীরাও এ বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। বুধবার মার্কিন স্পিকার মাইক জনসন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ইহুদি শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তোলেন। তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এ ধরনের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারি অনুদান দেওয়া বন্ধ করা হবে। এর উত্তরে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, তাদের অনেক ইহুদিও এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন এবং তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছেন।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও এ বিক্ষোভকে ভয়াবহ উল্লেখ করে বলেছেন, ইহুদিবিরোধী সমাবেশ এখন শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দখলে নিচ্ছে। এর পালটা জবাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, না, মি. নেতানিয়াহু। এ বিক্ষোভ ইহুদিবিরোধী বা হামাসপন্থি নয়। বরং আপনার চরমপন্থি সরকার গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে যেভাবে ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং ৭৭ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছে, সেটাকে তুলে ধরতেই এ বিক্ষোভ করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউজের কাছে বিক্ষোভ :

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানী ওয়াশিংটনে জর্জটাউন ও জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের (জিডব্লিউ) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার একটি ‘ক্যাম্প’ স্থাপন করেছেন। এখন হোয়াইট হাউজ ও পররাষ্ট্র দপ্তরের অদূরে অবস্থান নিয়েই বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের একজন আন্না ওয়েসেলস আলজাজিরাকে বলেন, কয়েকদিন আগে ইসরাইলকে আরও ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের সহায়তা দেওয়া নিয়ে কংগ্রেসে বিল পাশ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ বিলে সই করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে তাদের বিক্ষোভের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

ওয়েসেলস বলেন, ‘আমরা যদি ওয়াশিংটনে কিছু না করি, তবে আমরা আর আমাদের নৈতিক দায়িত্ববোধ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব না।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!