যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বুধবার (৫ জুন)। এক দফা পিছিয়ে এদিন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ইভিএমে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে মোতায়েন করা হয়েছে ২ হাজার ১০০ পুলিশ। আনসার থাকবে ৩ হাজার ৩৫০। সাথে থাকবে চার প্লাটুন বিজিবি সদস্য, র্যাবের চারটি টিম, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একজন এবং ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনে কেউ কোনোরকম বিঘœ ঘটানোর চেষ্টা করলে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রশাসন।
সদর উপজেলার এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরো ৮ জনসহ মোট ১৬ প্রার্থী প্রদিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী (আনারস) প্রতীকে, মোহিত কুমার নাথ (শালিক পাখি), আনোয়ার হোসেন বিপুল (দোয়াত কলম), শাহারুল ইসলাম (জোড়া ফুল), শফিকুল ইসলাম জুয়েল (কাপ পিরিচ), ফাতেমা আনোয়ার (ঘোড়া), তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু (মোটরসাইকেল) ও আরিফুল ইসলাম হীরা (হেলিকপ্টার) প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুলতান মাহমুদ বিপুল (টিউবওয়েল), শেখ জাহিদুর রহমান লাবু (বৈদ্যুতিক বাল্ব), শাহাজান কবির শিপলু (চশমা), কামাল খান পর্বত (তালা) ও মনিরুজ্জামান (উড়োজাহাজ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সেই সাথে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জ্যোৎ¯œা আরা মিলি (কলস), বাশিনুর নাহার ঝুমুর (ফুটবল) এবং শিল্পী খাতুন (হাঁস) প্রতীক নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন।
এদিকে, সদর উপজেলা এলাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করবেন ৫ হাজার ৪৮৭ কর্র্মকর্তা। এরমধ্যে ২১৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৭৫৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ৩ হাজার ৫১২ জন পোলিং অফিসার রয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে কেন্দ্র বুঝে নেন স্ব স্ব প্রিজাইডিং অফিসার। এরপর তার অধীন সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের ব্রিফ করেন তিনি। বুধবার সকাল আটটা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।
গত ২৯ মে যশোর সদর উপজেলার নির্বাচনের দিন নির্ধারিত ছিল। এর পাঁচদিন বাকি থাকতে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচন। একটি মামলার আদেশের পর নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
২৯ মে’র উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর একটি পদে থেকে আরেকটি পদে নির্বাচন করা যাবে না উল্লেখ করে রিটার্নিং অফিসার তাকে প্রতীক বরাদ্দ দেননি বলে দাবি করেন তিনি। এ কারণে শাহারুল ইসলাম তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। যার নম্বর ছিল ৫৫৭৫/২০২৪। এরপর গত ১৩ মে হাইকোর্ট শাহারুল ইসলামকে নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ তার অনুকূলে প্রতীক বরাদ্দের জন্য আদেশ দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আপিল বিভাগে সিপিএলএ নম্বর ১৭১৩/২০২৪ দায়ের করলে গত ২০ মে ‘নো অর্ডার’ আদেশ জারি করে আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের ওই আদেশ বাস্তবায়নে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আগামী ২৯ মে’র সকল পদের নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
সর্বশেষ, কমিশন ৫ মে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। এরপরই সরগরম হয়ে যায় নির্বাচনী মাঠ। আটজন চেয়ারম্যান, পাঁচজন ভাইস চেয়ারম্যান ও তিনজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রচারণায় নেমে পড়েন। যার কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যায় ও ভোট প্রার্থনা করেন। চলে সমানতালে মাইকিংও।
তবে, এবারের নির্বাচনে হিসেব মেলাতে পারছেন না ভোটাররা। কে বসবেন চেয়ারে, সেই আলোচনা যেন থামছেই না। তবে, যে আলোচনায় হোক না কেন সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে নির্বাচন শেষে রাতের মধ্যেই।
রিটার্নিং অফিসার আব্দুর রশিদ বলেন, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ করতে যা যা প্রয়োজন তার সবকিছু করা হয়েছে। কেউ কোনো রকম ঝামেলা করার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।
খুলনা গেজেট/কেডি